ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১২৯

অসহযোগ আন্দোলন: যা খোলা থাকবে, যা বন্ধ থাকবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:৩৪ ৪ আগস্ট ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া বর্তমান সরকার পদত্যাগের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। 

 

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘাত সরকারি হিসাবে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শুক্রবারই কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন রবিবার থেকে অসহযোগের ডাক দেয়। তবে এই কর্মসূচির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

 

সংঘর্ষের সময় ছাত্র জনতা হত্যার বিচার ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে এই সিদ্ধান্তের পরই স্পষ্ট হয় সংগঠনটি সরকার পতনের দাবি জানাতে যাচ্ছে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে সেই দাবিই তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এখন আর ৯ দফা নেই, তাদের দাবি এক দফা। এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। আসিফ মাহমুদ বলেন:

 

১. কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।

২. বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোন ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।

৩. সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।

 

৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

৫.  প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না।

৬. সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।

 

৭. বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।

৮. দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না,গার্মেন্টসকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না!

৯. গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।

 

১০. জরুরি ব্যাক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।

১১. পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যাতিত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু মাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।

১২.  দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।

 

১৩. বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যাতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।

১৪. আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।

১৫. বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপণি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।

 

১৬. হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১ টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

 

এর আগে শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন  কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি রবিবার (৩ আগস্ট) থেকে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

 

ঘোষণাপত্রে তারা বলেন-

'যেহেতু, বর্তমান সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, নারী-শিশু-ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক কেউ এ গণহত্যা থেকে রেহাই পাননি; যেহেতু, সরকার এ হত্যাযজ্ঞের বিচার করার পরিবর্তে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে;

 

যেহেতু, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটন করেছে; যেহেতু, ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-মজুরসহ আপামর জনগণ মনে করছে এ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ বিচার এবং তদন্ত সম্ভব নয়; সেহেতু, আমরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করছি। একইসঙ্গে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি।'