ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭২৬

যেসব নিয়ম না মানলেই বিপদ

আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভধারণ কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:০৪ ২৮ জুলাই ২০২১  

প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যাঁরা সন্তান লাভ করতে পারছেন না, আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান তাঁদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্ত করেছে। পদ্ধতিটাই শুধু আলাদা। টেস্টটিউব বেবি বা নলজাত সন্তান কিন্তু আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই হবে। এরপরেও এই পদ্ধতি বা আইভিএফ নিয়ে সংশয়, গোপনীয়তা, প্রশ্ন কম নয়। 

 

‘ভিট্রো’ শব্দটির অর্থ শরীরের বাইরে। এই পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে জীবন সৃষ্টি করা হয় বলে পদ্ধতিটিকে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন বলে। চলতি কথায়, টেস্ট টিউব বেবি। চিকিৎসা ব্যবস্থাটি শুরুর পর চার দশকেরও বেশি পেরিয়ে গিয়েছে। এরইমধ্যেই গোটা বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি শিশু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে। 

 

সাধারণত প্রতি চোদ্দ/পনের জনে একজন মহিলার সন্তানলাভে সমস্যা হচ্ছে। যে মহিলারা ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিয়োসিস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বেশি। শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী বা জরায়ুর সমস্যা, ডিম্বাণু নিঃসরণে অসুবিধে, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও গর্ভধারণে সমস্যা হয়। 

 

এ পদ্ধতিতে প্রথমে ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন দিয়ে স্ত্রীর ডিম তৈরির চেষ্টা করা হয়। স্বামীর সমস্যা থাকলে তাঁকে ওষুধ দিয়েও ফল হয়েছে। ওভারিতে সিস্ট, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক, এন্ডোমেট্রিয়োসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে অনেক সময়ে ল্যাপরোস্কোপি-হিস্টিরিয়োস্কোপি করা হয়। 

 

এই পদ্ধতিগুলিতে সন্তান আসার সম্ভাবনা বাড়ে। এগুলিতে কাজ না হলে আইইউআই বা (ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন, ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে কাছাকাছি আনা হয়) অথবা আইভিএ-এর পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান ধারণ করা যাবে না, এই খবর পাওয়ার পর অনেক দম্পতিই মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যান। আইভিএফ পদ্ধতি বেছে নিয়েও কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হয় না। তাই এই পদ্ধতি শুরুর আগে কিছু কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। হবু মায়ের খুব বেশি বয়স বা মানসিক চাপ যেমন এই পদ্ধতির জন্য ক্ষতিকর, তেমনই জীবনযাপনে কিছু ভুলও হতে পারে সমস্যা। 

 

তাই এই পদ্ধতি শুরু করার আগে জীবনযাপনে কিছু বদল আনার চেষ্টা করুন। সেগুলি কী জেনে নিন বিস্তারিত।

নিজেকে প্রস্তুত করুন : 

 

সেরা ফল পেতে, চিকিৎসা শুরুর আগে নিজের শরীর-স্বাস্থ্যকে আইভিএফ-এর প্রস্তুত করুন। নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন, হাঁটুন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, শরীরে রক্ত চলাচল হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। 

 

স্ট্রেস কমান : 

 

এই চিকিৎসা করাতে চাইলে স্ট্রেস কমাতেই হবে। ধারাবাহিক স্ট্রেসে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, প্রজননক্ষমতায় তার কুফল দেখা যায়। আইভিএফ প্রক্রিয়ায় মানসিক উৎকণ্ঠা সামাল দিতে, মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় বের করতে হবে।

 

ওজন ঠিক রাখুন : 

 

হবু মায়ের ওজন খুব বেশি হলে তাঁর ডিম্বাশয় নজরদারি করা মুশকিল হয়ে যায়। আবার খুব কম ওজন হলেও মায়ের শরীরে হরমোনের গোলমাল দেখা দিতে পারে। এর ফলে আইভিএফ পদ্ধতি কার্যকর না-ও হতে পারে। তাই এই পদ্ধতি শুরুর আগে কোনও পুষ্টিবিদের কাছে থেকে সঠিক ডায়েটের পরামর্শ নিয়ে নেয়া জরুরি। শরীরে পুষ্টিগুণ সঠিক পরিমাণে থাকলে তবেই সুস্থ সন্তানের জন্ম হবে।

 

নিয়মিত শরীরচর্চা :

 

যাঁরা আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানধারণ করতে চান, তাঁদের প্রত্যেক দিন অন্তত ৩০ মিনিট কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ করতে হবে। আইভিএফ শুরু হওয়ার পরও মেয়েদের শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তার জন্যেও কার্ডিয়ো করা খুব জরুরি। যে কোনও ব্যায়াম যাতে হৃদপিণ্ডের গতি বাড়বে, তা বেছে নিন। এতে রক্তচাপ কমবে, ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কমবে এবং আরও অনেক উপকার পাবেন।


ক্যাফিন নিয়ন্ত্রণ :

 

হালের গবেষণা বলছে, খুব বেশি ক্যাফিন শরীরে গেলে আইভিএফ দ্বারা সন্তানধারণের সাফল্য অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যায়। তাই প্রত্যেকদিন কতটা কফি খাচ্ছেন, তা নজর রাখা জরুরি। দিনে তিন কাপের বেশি কফি কখনওই নয়। অন্য যে খাবারে ক্যাফিন থাকে, সেগুলিও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।

 

মানসিক চাপ কমান :

 

মানসিক চাপ যে শুধু আইভিএফ পদ্ধতিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে তাই নয়, আপনার শরীরে নানা রকম গোলমালের কারণও হতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যোগ, ম্যাসাজ, ডায়েরি লেখা, ধ্যান, হাঁটা— অনেক ভাবেই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খুব বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই পেশাদার কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন।

 

ধূমপান বন্ধ : 

 

ধূমপান ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু - দুইয়ের পক্ষেই ক্ষতিকর। তাই ধূমপানের অভ্যাস থাকলে দ্রুত ত্যাগ করুন। আপনার আইভিএফ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার সময় ধূমপান নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবেন। 

 

একইসঙ্গে জীবনযাপনে দূর কতে হবে যে কোনো ধরনের অনিয়ম। সুশৃংখল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলে এই চিকিৎসা-ই শুধু নয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে তা হবে সহায়ক।