ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৪৫

আগাছা নির্মূলের এখনই সময়

জাফর ওয়াজেদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৪১ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন অগ্রগতির পথে, মধ্যম আয়ের মর্যাদার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, বিশ্বে যখন প্রশংসিত তাঁর নেতৃত্বের মহিমা, তখনই একদল রাজনৈতিক পরগাছার কর্মকা- সরকারের অর্জনকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাছা উপড়ে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলেছেন। শুধু বলেই থেমে থাকেননি, কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন। প্রমাণ আজ চোখের সামনে। তিনি প্রমাণ করেছেন মানুষের অধিকার, উন্নয়ন, অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এমন দুর্বৃত্তদের ঠাঁই হবে না, রেহাই পাবে না কেউ। এমনকি তারা নিজের দলের হলেও। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের জন্য তাঁর বার্তা পরিষ্কারÑ জিরো টলারেন্স। বঙ্গবন্ধুও বলতেন, বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই এখানে গাছের সঙ্গে কিছু পরগাছাও জন্মায়। যে জমিতে আগাছা আছে, সে জমিতে ফসল হয় না। আগাছা তুলে ফেলতে হয়।

আগাছা রাজনীতিতেও ভরপুর। রাজনীতির ক্ষেত্রে এত অবাঞ্ছিত, দুশ্চরিত্র মানুষ কি করে এসে জুটল! সেও এক রহস্য। আসলে জোটেনি। এদের জোটানো হয়েছে। জুটিয়েছেন নেতারা নিজেরাই ভোটের লোভে, ক্ষমতার লোভে। লোভে পাপ, পাপে সর্বনাশ। এদের সংস্পর্শে রাজনীতি আজ অশ্রদ্ধেয়। এসব রাজনীতিক জনগণের শ্রদ্ধা হারাতে বসেছেন। সোজা কথায়, রাজনীতি এবং নেতৃত্ব দুই-ই ভোটের ‘ভিকটিম’। রাজনীতি হয়ে পড়েছে সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি। ২০০১ সাল থেকে তা দেখা গেছে। সকল প্রকার ‘দুষ্টামি-নষ্টামি’ প্রশ্রয় পেয়ে রাজনীতিকদের চরিত্র দূষিত করে দিয়েছে। অদূরদর্শী রাজনীতির পরিণাম বহুদূরগামী। ভোটের লোভে অনুপ্রবেশকারী তথা আগাছাদের দুধ-কলা দিয়ে পোষা হয়েছে। একদিকে দেশের ঘাড়ে বিরাট জনবোঝা চাপানো, অপরদিকে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। রাজনীতির পরোক্ষ প্রশ্রয়ে যে চোরাকারবার ফেঁপে উঠেছে সে কারবারের পথেই এখন বিদেশ থেকে বিস্ফোরণের আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। নীতিবিহীন রাজনীতি রাজনীতিকদের চরিত্রহানি ঘটাচ্ছে। অসাধুতা এমন সর্বব্যাপী যে, দেশবাসী রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃবর্গের ওপর আস্থা হারাতে বাধ্য। রাজনীতি করেও দুর্নীতিমুক্ত আছেন, এমন কথা ভাবা কঠিন হয়ে উঠেছে। অঘটন ঘটনকারী দুর্দান্ত ব্যক্তিরা ধরা পড়লে দেখা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রেই তারা নেতৃবর্গের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়পুষ্ট। নেতাদের মধ্যে চরিত্রবান ব্যক্তি আদৌ নেই, এমন কথা কেউ বলবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সেই সব সাদা মানুষের রাজনীতিতে চলার পথ সহজ করে দিতে চান রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা দানবদের কঠোর হস্তে দমন করার মাধ্যমে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধপরিকর।

আগাছা কোথায় নেই! দেশের জীবনে রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সংবাদপত্রও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের অভাব। রাজনৈতিক দল ভাবে আস্ফালনেই বীরত্ব জাহির হয়। সংবাদপত্র ভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টিতেই কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। কোন কোন সংবাদপত্রের সংবাদ পরিবেশনা এবং হেডলাইন রচনা দেখলে কখনও কখনও সন্দেহ জাগে জিনিসটা স্বদেশী নাকি বিদেশী পাঠকের জন্য। কিংবা গঠনমূলক নাকি উস্কানিমূলক। দেশকে কৃষ্ণবর্ণে রঞ্জিত করে দেখাবার প্রচ্ছন্ন প্রয়াস মনে হতে পারে। কোন কোন সংবাদপত্রের ওপর বিদেশী প্রভাব থাকা বিচিত্র নয়। জঙ্গীদের অর্থায়নও থাকতে পারে। দেশের ত্রুটি-বিচ্যুতির উল্লেখ থাকবে না এমন কথা বলা হচ্ছে না। তবে এখানেই সেই ডিগনিটির প্রশ্ন ওঠে। লেখার একটা ভঙ্গি আছে। সংবাদ পরিবেশনের দোষে শুধু যে দেশের সম্ভ্রমহানি ঘটে তা নয়, সংবাদপত্রের নিজেরও সম্মান থাকে না। রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্র উভয়ই অতিমাত্রায় মুখর। উভয় স্থানেই আগাছারা বেশ বাকশিল্পে টইটম্বুর। সেজন্যই সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন। দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ হতে পারে, জাতীয় সংহতি নষ্ট হতে পারে এমন কোন কথা অসতর্কভাবে কখনও উচ্চারণ করা উচিত নয়।

রাজনীতিতে যাদের একসময় বৃক্ষ ভাবা হতো, সময়ের বিবর্তনে এরা আজ আগাছায় পরিণত হয়েছে। বেগম জিয়া জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটিয়ে, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করেছেন। আজকে তাই তার দলও বলছে, সব জায়গা থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু সে কাজটা তারা তাদের নিজ দলেই শুরু করেনি। দীর্ঘদিন ধরে আগাছা, পরগাছা লালিত বিএনপি স্বকীয় ও স্বদেশী রাজনীতির পথে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরের পরবর্তী সময়ে দেশে হিংসার রাজনীতির নয়া ধরন প্রবর্তন করেছিলেন সামরিক জান্তা শাসক ও রাজাকার পুনর্বাসনকারী জেনারেল জিয়া। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের হিংসাশ্রয়ী শাসনে পিষ্ট মানুষ আজও ভোলেনি দুঃসহ সেই সব ঘটনা। দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে অনেককেই। আজ সেই বিএনপি-জামায়াত জোটনেত্রী, যিনি পেট্রোলবোমা মেরে টানা তিন মাস জীবন্ত মানুষ হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভোল তিনি পাল্টাতেই পারেন। ১৯৯০ সালের আন্দোলনকালে তিন জোটের রূপরেখায় তথা যুক্ত ঘোষণায় যা যা ছিল, তার কিছুই ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে কার্যকর করেছেন, তার দৃষ্টান্ত মেলে না। বিরোধী সব দলের চাপে পড়ে অনেক গাইগুঁই শেষে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে সংবিধান সংশোধনে সম্মত হয়েছিলেন। সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বিল পাস হয়েছিল সংসদে। কিন্তু সেই সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর কতটা করেছেন, বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দিতে কতবার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে তা সবাই জানে। সংসদ নেত্রী নিজেই সংসদকে অবহেলা করে অধিবেশনে যোগ দিতেন না। সংসদে উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। বিরোধী দলের আনা প্রস্তাব বা নোটিস কতটা গ্রাহ্য হয়েছে তা কার্যবিবরণীতেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। বৈদেশিক চুক্তি নিয়ে সংসদে কোন আলোচনা হয়নি। জাতীয় ইস্যুতে বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলা দূরে থাক, বিদ্বেষপূর্ণ ভাষ্যই শোনা যেত। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে হিংস্ররূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত নেত্রী। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিদ্বেষপূর্ণ মামলায় জেলে পুরেছেন। মানুষের জীবনকে তিনি কানাকড়ি মূল্য দেন না, তার প্রমাণ রেখেছেন।

পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক জান্তা ও তাদের উত্তরসূরিরা যে হিং¯্র সমাজব্যবস্থা চালু করেছিল সেই সমাজব্যবস্থাকে আমূল উৎপাটিত করে, সম্পূর্ণ এক নতুন সমাজ গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সকল শুভকর্মের উদ্দেশ্যই লোকহিত। সে পথ শেখ হাসিনা অনেক আগেই উন্মুক্ত করেছেন। দেশের ধন যাতে দশের ব্যবহারে লাগে সে পদক্ষেপেও সক্রিয়। প্রতিটি মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করাই তাঁর মূল লক্ষ্য। তিনি এটাও বোঝেন, প্রতিটি মানুষকে খেটে খেতে হবে। বিদ্যা বুদ্ধি যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেককে যথাযথ যোগ্য কাজে নিয়োজিত করা হবে। কেউ বেকার এবং নিরক্ষর থাকবে না। বিনা চিকিৎসায় প্রাণ যাবে না। ক্ষুধার্ত মানুষ বলে কিছু থাকবে না। দরিদ্রের দুর্বলের অক্ষমের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিবেকহীন সমাজ যুগ যুগ ধরে যে অন্যায়কে পোষণ করে এসেছে, শেখ হাসিনা তার অবসান ঘটাতে নিরলস শ্রম দিচ্ছেন। প্রতিটি মানুষের মনুষ্যচিত জীবনযাপনের এমন সুচিন্তিত, সুবিস্তীর্ণ অবস্থা মানুষ আগে কখনও দেখেনি, শোনেনি, ভাবেওনি। সেই রকম সমাজ তৈরি করতে চান তিনি। ‘তিমির বিদার উদার অভ্যুদয়’-এর আভাস দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি পদক্ষেপই সুদূরপ্রসারী, শুভ্র সম্ভাবনাময়। যেখানে একে অন্যের বিরুদ্ধে ঈর্ষা বিদ্বেষ পোষণ করবে না। হিংসা, লোভ, অহংভাব ইত্যাদি দুষ্ট রিপু থেকে মুক্ত হয়ে নতুন বাঙালীর সৃষ্টি হবে এবং পৃথিবীতে নতুন যুগের আবির্ভাব ঘটাবেন শেখ হাসিনা। আর তা ঘটানোর জন্যই রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে বেড়ে ওঠা আগাছা নির্মূল করা জরুরী। ভ্রান্তির বেড়াজাল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক এসব আগাছা। বিএনপি-জামায়াত এবং কামাল হোসেনদের রাজনীতি তথা দলনীতি মানুষের মনের মতো দেশকেও ছোট করে দিয়েছে। শিখিয়েছে হিংসা বিদ্বেষ। মানুষ যেখানে হিংসায় উন্মত্ত, পরিবেশ সেখানে স্বভাবতই বিষাক্ত। বিষ মানুষের মনে। সে বিষই সংক্রমিত হচ্ছে পরিবেশ হয়ে রাজনীতিতে। মন নির্মল হলে পরিবেশ ও রাজনীতি আপনিই নির্মল হবে। নদীর পানি, বায়ু হবে নির্মল, আকাশ হবে হাস্যোজ্জ্বল। চারদিক করবে আলোয় ঝলমল। দেশের মাটিতে জুড়াবে মানুষের অঙ্গ। শেখ হাসিনাকে সেই পথে যেতে হলে শত ফুল যেমন ফোটাতে হবে, তেমনি শত আগাছাও নির্মূল করতে হবেÑ এখনই সে সময়।

লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)
 

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর