ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৩৮

আত্মহত্যা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৪৭ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে। মানবের তরে আমি বাঁচিবার চাই। জীবন সুন্দর! যত কষ্টই থাকুক বেঁচে থাকা তবু আনন্দের। কথায় আছে, মানুষ নাকি বাঁচার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে। তাহলে কেন আত্মহত্যার মতো কাণ্ড অবলীলায় ঘটিয়ে ফেলে সেই মানুষ?

 

দেশে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটা শিক্ষিতদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিতে মন্দাসহ সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে, মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগলে আত্মহত্যার হারও বাড়ে। অনেকে আবার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাধ্য হয়েও আত্মহত্যা করেন।

 

নেপথ্য কারণগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক।

 

তারা মনে করেন, মূলত হতাশা থেকেই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেও দেখা যাচ্ছে। সাধারণত, দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এক. আগে থেকে পরিকল্পনা, আয়োজন করে, সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন অনেকে। যেটাকে বলা হয় ডিসিসিভ সুইসাইড। দুই. হুট করে আবেগের রাশ টানতে না পেরে আত্মহত্যা করেন অনেকে। একে বলা হয় ইমপালসিভ সুইসাইড।

 

তারা বলেন, যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, দাম্পত্য কলহ, উত্ত্যক্তকরণ, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। প্রচারমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতিপ্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।

 

তবে তাদের মতে, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে আত্মহত্যা ঠেকানো যায়। এটি প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি–

 

  • প্রথমত আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইলে সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
  • শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে।
  • বাবা-মায়েরও উচিত সন্তানদের আরও বেশি সময় দেয়া, তাদের বোঝার চেষ্টা করা, সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে দূরত্ব কমানো।

 

  • বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ সব মানসিক রোগের দ্রুত শনাক্ত করা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে। আর পরিবারে প্রত্যেকের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাতে হবে।
  • আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের সময় গণমাধ্যমগুলোকে সবসময় অনুমোদিত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।

 

  • সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর ব্যবহারকারীদেরও সতর্কতার সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে মন্তব্য ও ছবি পোস্ট করতে হবে। এখানেও কোনও আত্মহত্যার ঘটনাকে খুব মহৎ করে দেখানোর চেষ্টা করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর কর্তৃপক্ষেরও নিজস্ব নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

 

  • যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক হটলাইন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যে হটলাইনে রোগী বা তার পরিবার যোগাযোগ করে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শসহ কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে থাকতে পারে। যাতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে।