ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০৭৫

আমাদের কান্না, আমাদের ঘৃণা  

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৫১ ১৬ মার্চ ২০১৯  

১. নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা গিয়েছিলেন স্রস্টার কাছে দু’হাত ওঠাতে। তারা ছিল কারো পিতা, কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো বন্ধু। নিরপরাধী এই আদমসন্তানদের ওপর ঘৃণ্য বর্বরোচিতভাবে উপুর্যুপরি বন্দুক হামলা চালানো হল। অন্তত তিন বাংলাদেশীসহ ৪৯ জন মনুষ্যরক্তে ভিজে উঠলো নিউজিল্যান্ডের মাটি। অল্পের জন্য বেঁচে গেলো বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের সদস্যরা।

 

২. ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের বন্দুক ধরা, টার্গেট তাক করা, গুলি ছোড়া, ম্যাগাজিন লোড করা দৃশ্য দেখে এটা স্পস্ট হয়ে ওঠে হত্যাকারীদের পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘদিনের এবং এরা বিশেষভাবে ' ট্রেইনড'

 

৩. চারজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে অষ্ট্রেলিয়ার  Brenton Tarrant  নামের শ্বেতাঙ্গ এক ক্রীষ্টানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মানুষরুপী এই নরপশু 'অধিবাসী খেদাও' নীতির এবং মুসলিম বিদ্যেষের কাছে নিজের বিবেক, বিবেচনা, যুক্তি-বুদ্ধি বিক্রি করেছিল। শ্বেতাঙ্গ খ্রীস্টান হওয়ার জাত্যাভিমানী তাদের মগজ ধোলাই এতই তীব্র ছিল যে,উপসনালয় থেকে কেউই যেন পালাতে না পারে সে জন্য এক একজনকে টার্গেট করে করে খুনের উন্মততায় বন্দুক চালিয়েছে।

 

৩. সময়কালে প্যারিস, লন্ডন এমনকি ঢাকার হলি আর্টিজানের নারকীয় ঘটনায় জংগীদেরকে একচ্ছত্রভাবে ' মুসলিম জংগীবাদের' যে কালো লেবাস পরানো হয়েছিল এই হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করলো খুনীদের আরেক নাম খুনী, হত্যাকারীদের আরেক নাম হত্যাকারী, জংগীদের আরেকনাম জংগীই মাত্র। এদের কোন দেশ, জাত, ধর্ম নেই।

 

৪. 'অধিবাসীরাই সব সুযোগ নিচ্ছে' এমন অভিযোগ করল যে শ্বেতাঙ্গ, তাদেরই পূর্বপুরুষ আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের মেরে, আফ্রিকার নিরীহ নিগ্রোদের ধরে এনে ক্রীতদাস বানিয়ে সভ্যতার পিলসুজে কালিমা লেপে দিয়েছিল। খোদ অষ্ট্রেলিয়ার সরল আদিবাসীর রক্তের মূল্যে গড়ে উঠেছে আজকের তিলোত্তমা সভ্যতা।

 

৫. নিউজিল্যান্ড শতাধিক নৃগোষ্ঠী শান্তি - সৌহার্দে বসবাস করে । খুনীরা কেন এমন শান্তিপ্রিয় দেশে মসজিদে উপাসনারতদেরকে খুন করলো সেটি আবেগ, নিজস্ব রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের উর্ধে থাকলে পর্দার নেপথ্যে থাকা ' মাস্টার মাইন্ড ক্রিমিনাল' দের খুঁজে বের করা সহজ হবে । নির্মোহ দৃষ্টিভংগী, ডি এন এ টেষ্টসহ লাগসই প্রযুক্তি, জংগী নির্মুলের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই হত্যাকান্ডের কুশীলবদের বের করা সম্ভব হতে পারে।

 

৬. পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষের মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন পৈশাচিকতা যেন লাল - সবুজের পতাকার দেশে আর কখনই যেন না হয়, সেদিকে আমাদের চিত্তকে সুতীক্ষ্ম রাখতে হবে।

 

# মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ, উপ অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর