ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৩০

ইন্দো-চীন অস্থিরতার শেষ কোথায়?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৪২ ১৮ জুন ২০২০  

সীমান্ত বৈরিতা প্রায় ছয় দশকের। কিন্তু নিকট অতীতে এমন প্রাণহানির ঘটনা কখনো ঘটেনি। দ্বন্দ্ব আছে। আছে সীমানা লঙ্ঘন ও জবরদখলের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। উত্তেজনা আছে, কিন্তু সেই অর্থে যুদ্ধ বাধেনি সাম্প্রতিক কয়েক দশকে। ত্রুটিপূর্ণ সীমান্তরেখা নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে প্রায়ই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো হাতাহাতি, ধস্তাধস্তিও বেধে যায়। একে অন্যের দিকে পাথর ছুড়তেও দেখা গেছে অতীতে। কিন্তু গত অন্তত সাড়ে চার দশকে কোনো পক্ষকেই গুলি চালাতে দেখা যায়নি। সোমবারও এর ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। তার পরও প্রাণহানি ঘটল।

৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনকে এভাবেই বিবাদে ব্যস্ত রেখেছে সেই ১৯৬২ সাল থেকে। এলএসিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত স্থল সীমান্তরেখা।

সোমবারের লাদাখে নজিরবিহীন সংঘর্ষে সাড়ে চার দশকের মধ্যে এ প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। কেবল ভারতেরই অন্তত ২০ সেনা নিহত হয়েছেন। চীনের কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, তা তাত্ক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ইন্দো-চীন সীমান্ত বিরোধ নতুন করে প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ানোয় তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শান্তিকামীদের জন্য।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার দেখছেন না। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. ভিপিন নারাং বলেছেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ, খুবই খারাপের দিকে এগোচ্ছে। যখন প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, তখন পরিস্থিতি শান্ত রাখা বিবদমান দুই পক্ষের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে।’

দি ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শশাঙ্ক জোশি সোমবারের ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘৪৫ বছরে একটিও গুলি চলল না। অথচ এক সন্ধ্যাতেই পাথর ছোড়াছুড়ি আর লাঠি নিয়ে মারামারিতে অন্তত ২০ সেনার প্রাণ গেল।’

সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত ও চীনের মধ্যে। দুই দেশের সেনারা কয়েক দফায় ধস্তাধস্তি ও পাথর ছোড়াছুড়িও করেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় কেউ মারা যাননি। সোমবার সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে গেল। তাহলে কি বলা যায়, দুই দেশ আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে?

নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের অভিযোগ, চীন তাদের ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের মতো এলাকা দখল করে রেখেছে। আর তাদের সাম্প্রতিকতম দাবি, মে মাসের শুরুর দিকে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছে চীনা সেনারা। সেখানে তারা পরিখা খনন করেছে ও তাঁবু গেড়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে সে সময় জানানো হয়েছিল। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বলেছেন, চীনা সেনারা কেবল গত এক মাসেই ৬০ বর্গকিলোমিটারের মতো জায়গা দখল করে নিয়েছে।

এদিকে চীন সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে স্থাপনকৃত একটি বিমানঘাঁটিতে যাতায়াতের জন্য ভারতের কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে। ভারত ২০০৮ সালে তাদের ওই বিমান ঘাঁটি পুনরায় সচল করেছিল। আর সংযোগ সড়কটি নির্মাণ হয়েছে এলএসির কাছ দিয়েই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত ও চীন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিল। কিন্তু সোমবারের ঘটনা উত্তেজনার সলতেতে ঘি ঢেলে দিল। এখন কেবল আগুনের তেজ বাড়ার পালা। সূত্র: বিবিসি