ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৪ আশ্বিন ১৪৩১
good-food
৭৭

উপকারী মিষ্টি আলু

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৫ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

স্বাস্থ্যকরভাবে দৈনিক কার্বোহাড্রেইট’য়ের চাহিদা মেটাতে মিষ্টি আলুর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যেমন- আঁশ, ভিটামিন এ এবং পটাসিয়াম- দেহের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে কিছু মানুষের জন্য জন্য প্রতিদিন মিষ্টি আলু খাওয়া উপকারী নাও হতে পারে।

 

পুষ্টিগুণ

প্রতি এক কাপ মিষ্টি আলুতে থাকে- ১৮০ ক্যালরি, শূন্য পরিমাণ চর্বি ও স্যাচুরেইটেড ফ্যাট. সোডিয়াম ৭২ গ্রাম, কার্বস ৪১ গ্রাম (আঁশ ৭ গ্রাম, চিনি ১৩ গ্রাম), প্রোটিন ৪ গ্রাম।

 

হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

আঁশ এবং পটাসিয়ামের উৎস হিসেবে মিষ্টি আলু হৃদ-স্বা্স্থ্যে উপকারী প্রভাব রাখে। ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ের সূত্রে জানানো হয়, এক কাপ বেইকড মিষ্টি আলু দৈনিক আঁশের চাহিদার ২৪ শতাংশ এবং পটাসিয়ামের চাহিদার ২০ শতাংশ মেটাতে পারে। আঁশ রক্তে থাকা চর্বি শুষে নিতে পারে। ফলে বাজে কোলেস্টেরল’য়েল মাত্রা কমে। আর পটাসিয়াম রক্ত চাপ কমাতে পারে। ফলে রক্ত প্রবাহের মাত্রা ঠিক থাকে, যে রক্ত বাহিত শিরা, উপশিরা ও ধমনী ক্ষতির হাত থেকে বাঁচে।

 

দৃষ্টিশক্তির সুরক্ষক

বেটা ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আর গাজর ছাড়াও এই পুষ্টিগুণের ভালো উৎস হল মিষ্টি আলু। এক পরিমাণ থেকে মিলবে দৈনিক চাহিদার ২১৩ শতাংশ।

 

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ

যদিও স্বাদে মিষ্টি তবে মিষ্টি আলুতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় রক্তের শর্করার মাত্রা সহনীয় মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদন সারাহ অ্যালসিং, একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “উচ্চা মাত্রায় আঁশ রয়েছে মিষ্টি আলুতে। যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে। যে কারণে রক্তে শর্করা মেশে ধীরে। ফলে হঠাৎ শর্করার মাত্রা রক্তে বাড়তে পারে না।” এছাড়া ফ্লাভানয়েডস এবং পলিফেনল্স যৌগ থাকায় শর্করা শোষণ যেমন ধীর করে তেমনি ইন্সুলিন’য়ের নিঃসরণের মাত্রা উন্নত করতে পারে। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় থাকে।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব

এক কাপ মিষ্টি আলু থেকে ভিটামিন এ মিলবে দৈনিক চাহিদার ১৫৬ শতাংশ। আর এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত রাখতে সাহায্য করে। অ্যালসিং বলেন, “ভিটামিন এ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।” যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে, ভিটামিন এ’য়ের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। সংক্রামক রোগে আক্রান্তর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। প্রতিদিন মিষ্টি আলু খেতে পারলে ভিটামিন এ’র অভাব পূরণ করা যায়।

 

হজম তন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা

পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আঁশ প্রয়োজন। আর আগেই বলা হয়েছে মিষ্টি আলু আঁশের চাহিদা মেটাতে পারে। আঁশ আসলে হজম হয় না বরং মলাশয়ে গিয়ে গাঁজানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে, যাকে বলে ‘প্রোবায়োটিকস’। এছাড়াও অন্যান্য বিপাকীয় উপাদান তৈরি করে। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। প্রয়োজনীয় আঁশ গ্রহণ করতে পারলে পেট পরিষ্কার থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

 

অদ্ভূত অপকারীতা হল দেহের রং কমলা হয়ে যেতে পারে

বিচিত্র হলেও বিষয়টা হল, বেটা-ক্যারোটিন যুক্ত খাবার বেশি খেলে গায়ের রং কমলা হতে পারে। মিষ্টি আলু এবং গাজরে এই উপাদান রয়েছে। পরিস্থিতিকে বলা হয়, ‘ক্যারোটিনোডারমিয়া’। অ্যালসিং বলেন, “দৈনিক তিন কাপ মিষ্টি আলু কয়েক মাস ধরে খেলে এই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। তবে বিষয়টা মারাত্মক না।”

 

উচ্চমাত্রায় অক্সালেইট

‘ক্যালসিয়াম অক্সালেইট স্টোন্স’ বা কিডনিতে পাথরজনিস সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য মিষ্টি আলু খাওয়া এড়াতে হবে। অ্যালসিং বলেন, “মিষ্টি আলু উচ্চ অক্সালেইটস সমৃদ্ধ, প্রতি আধা কাপ পরিমাণে ৫৪ মিলিগ্রাম মিলবে। তাই যাদের বৃক্কে পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে তাদের অক্সালেট গ্রহণের মাত্রা দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ মিলিগ্রামের মধ্যে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়।”

 

তবে যারা বৃক্কে পাথর হওয়ার ঝুঁকিতে নেই তারা উচ্চ অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার খেতেই পারেন। আর এই সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ। কারণ পর্যাপ্ত পানি পানে প্রস্রাব পাতলা হয় আর ক্যালসিয়াম পাথর হওয়া রোধ করে। এভাবে বৃক্কে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়।