ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৪১

করোনা নিয়ন্ত্রণে আরেকটু সচেতন হোন

উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করুন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:২৬ ২০ এপ্রিল ২০২০  

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, জনগণ আরেকটু সচেতন হয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রাখলে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

 

সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ‍

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্বে যেখানে হাজার হাজার লোক প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসের আজকে ২০ তারিখ, এখন পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি যে আমাদের জনগণ যদি আরেকটু সচেতন থাকেন, আরেকটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণর করা সহজ। আমি আশা করি সবাই করবেন।”


নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু দুঃপ্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউকে, ইউএস, ইউরোপিয়ান দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশে যে পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে এটা ভয়াবহ। একমাত্র ইউএসএতেই আমাদের বাঙালি প্রায় দেড়শজনের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এ রকম একটা উন্নত দেশে থেকে এভাবে আমাদের বাঙলিরা মারা যাবে।


“ইউএসএতে যেমন মারা গেছে ইউকেতেও আমাদের এমনকি বাঙালি ডাক্তারসহ অনেকেই সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে। আর এভাবে অন্যান্য দেশেও আমরা যদি দেখি বাঙলি অনেকেই মারা যাচ্ছে। সেই তুলনায় আমি যদি বাংলাদেশের কথা বলি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৮৫ জনের পরীক্ষা হয়েছে। দুই হাজার ৪৫৬ জনের ভেতরে এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে আর ৯১ জনের মতো এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছে। এটাও দুঃখজনক। কেউ মারা যাক এটা আমরা চাই না।”

 

নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাইকে নিজেকেই সুরক্ষিত করতে হবে। আমরা যদিও চেষ্টা করে যাচ্ছি তবুও আমরা দেখি আসলে আমাদের দেশের অনেকেই এটা ভালোভাবে মানতে চান না, যার ফলে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেন।

 


“তবে খুব দোষ দেয়ারও কিছু নেই, কারণ এমন একটা ভাইরাস যেটার কোনো লক্ষণও বোঝা যায় না, দেখাও যায় না। শুধু আক্রান্ত হলে পরীক্ষা করলে তখন বোঝা যায়, অথবা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন বোঝা যায়।”


 
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য একটু কষ্টের মাস হবে। কারণ এপ্রিল মাসে একটা প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে, কারন এর একটা ট্রেন্ড আছে। আমরা অন্যান্য দেশের অবস্থাটা যদি দেখি তাহলে এটাই দেখা যায় একবার যদি শুরু হয় তখন এটা সংক্রমিত হতে থাকে। সেক্ষেত্রে বহু আগেই সতর্ক করেছি যে এপ্রিল মাসে সবাইকে একটু আরও সাবধানে থাকা দরকার।”

 

নতুন ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

 

 

 

উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতের নির্দেশ

 

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজারে বেচাকেনা চালু রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে; যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোনো বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। বড় খোলা জায়গায় যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার পরিচালনা করতে হবে।

 

করোনাভাইরাসের মহামারীর চলমান পরিস্থিতে রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। …”

 

“এখন ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে, আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সাথে অন্য যা প্রয়োজন-তরিতরকারি, ফলমূল যে যা পারবেন উৎপাদন করবেন- আমরা সেটাই চাই।”

 

সরকারের দেওয়া ধান সংগ্রহের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “সাধারণত বোরোতে আগে আমরা যা নিতাম তার থেকে অনেক বেশি আমরা এখন নিচ্ছি। এখন আমরা ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান,১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করব।

 

“এটা আমরা ক্রয় করব।…তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব।”

 

সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের দেওয়া অর্থ ও ভাতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাছাড়া আমরা ১০ টাকা কিলোতে ওএমএস চালু করেছি। সেটা আমরা ৫০ লক্ষ লোকের রেশন কার্ড আছে যারা এই ১০ টাকায় ওএমএস এই চালটা কিনতে পারে।”

 

যারা সরকারে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, অথচ কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না তাদের তালিকা তৈরি করে ৫০ লাখ নতুন রেশন কার্ড করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।

 

“ওএমএসে চালটাও ১০ টাকা দিয়েছি সেখানে আরো ৫০ লক্ষ পরিবারের জন্য আমরা কার্ড করে দেব। সেই তালিকাও আমরা করতে বলেছি যেটা একেবারে ডেটাবেইজ করা থাকবে।

 

“তাতে আমরা হিসেব করে দেখেছি, প্রায় ৫ কোটি মানুষ অর্থাৎ একটা পরিবারকে যদি আমরা চার সদস্য বা পাঁচ সদস্য হিসেবে ধরি তাহলে কিন্তু ৫ কোটি মানুষই কিন্তু এর ওপর পাবে। অর্থাৎ প্রতিটা মানুষ যেন অন্তত খাদ্য পায়।”

 

কোভিড ১৯ মোকাবেলায় সারাদেশে সারারণ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার মধ্যেও শ্রমজীবী মানুষরা যাতে ধান কাটার কাজ করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের খাদ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই করোনাভাইরাসের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য মন্দা সৃষ্টি হবে আগামীতে হয়ত বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের মজুদ রাখতে পারি তাহলে আমরা সেই দুর্ভিক্ষে পড়ব না বরং আমরা অনেককে সাহায্য করতে পারব। আমাদের সেই ব্যবস্থা এখন থেকে নিতে হবে।”

 

কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।

 

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই যে যা পারেন কিছু চাষ করেন, কিছু তৈরি করেন বা এই যে ধান কাটার পরেও সেখানে আরেকটা ফসল কি করা যায় আমাদের করা উচিত।”

 

মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় প্রণোদনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার উপরে ইতিমধ্যে আমরা প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। আমরা কেন করেছি এটা? এইজন্য করেছি, আমাদের অর্থনীতিটাকে সচল রাখার জন্য।

 

“কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না, সব সেক্টরের জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।”

 

ধান কাটায় ছাত্রলীগের প্রশংসা

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমির ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। ধানকাটা নিয়ে সমস্যা যখন সৃষ্টি হল তখন আমি ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা নিজ নিজ এলাকায় কৃষকের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ধান কেটে দিচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা করোনা দুর্যোগে এগিয়ে এসেছে। তারা কৃষকের ধান কেটে সহযোগীতা করছে। নিজেরা ফর্মুলা নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়েছে এবং বিতরণ করেছে।"

 

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিজেরাই হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানিয়ে বিতরণ করছে। বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে। এ জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ। 

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ছাত্রলীগই নয়, আমাদের সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর