ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ৩ মাঘ ১৪৩১
good-food
১২৯৬

খন্দকের যুদ্ধ ও সাত মসজিদ

একটি বকরী-সামান্য গমেই হাজারজনের খাবার

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৭ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

১. মদিনায় ৭ টি বিশেষ মসজিদ প্রায় একই এলাকায় অবস্থিত, যেখানে মুহাম্মদ (সা.) নিজে বা সাহাবীগণ খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মসজিদগুলো যথাক্রমে - আল ফাত মসজিদ, সালমান আল ফারসি মসজিদ, আবুবকর আস সিদ্দিক মসজিদ, ওমর বিন খাত্তাব মসজিদ, সা'দ বিন মা'জ মসজিদ , আলি বিন আবি তালিব মসজিদ , ফাতেমা আজ জাহারা মসজিদ।

২. মদিনায় মুসলমানদের ক্রম উত্থান দেখে মক্কার কুরাইশসহ বিভিন্ন গোত্র মুসলমানদের সমূলে ধংস করার চক্রান্ত করে। মদিনার ইহুদিরাও এই কূটজালে অংশ নেয়।

৩. মদিনার তিনদিক প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত থাকলে উন্মুক্ত দিক থেকে মুশরিকরা আক্রমনের পরিকল্পনা করে।

৪. মুশরিকদের ছিল প্রায় ১০,০০০ সেনা, ৬০০ উট ৩০০ ঘোড়া এবং বিপুল অস্ত্র সরঞ্জাম। পক্ষান্তরে, মুসলমানদের ছিল ৩০০০ এর মত সেনা, আর হাতে গোনা অস্ত্রাদি। তাই মুশরিকরা জয়ের ব্যপারে সুনিশ্চিত ছিল।

৫. সাহাবী সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন পারস্যবাসী। তিনি পরিখা বা খন্দকের যুদ্ধের ধারণা দেন। এটি আরববাসীর কাছে অপরিচিত ছিল। প্রতি দশজন করে আনসার ৪০ হাত করে খন্দক তৈরী করেন। মুহাম্মদ ( সা.) স্বয়ং মাটি কাটতে হাত লাগান।

৬. মুশরিকরা মদিনার কাছে এসে অপ্রত্যাশিতভাবে খন্দক দেখে বিস্মিত ও হতাশ হয়। এই খন্দক অতিক্রম করে ঘোড়াদেরকে কোনক্রমেই মদিনায় নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ কেউ সেটা চেষ্টা করলে তখনই তীরের আঘাতে প্রাণ হারাতে হত। ফলে মুশরিক এবং ইহুদিরা মুসলমানদের ঘিরে রাখলেও তারা সন্মুখ সমরের কোন সুযোগই পায় নি। বরং ৪০ দিন নিস্ক্রিয় থেকে নিজেরায় আত্মকলহ - দল - উপদলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রবল ঝড় বৈরী আবহাওয়া তাদের ব্যাপক রশদই শুধু নষ্ট করেনি, বরং মনোবল পুরোপুরি ভেংগে দেয়। ফলে মদিনা বিজয়ের স্বপ্নভংগের স্বাদ নিয়ে তারা মক্কায় ফিরে যায়।

৭।. বর্নিত আছে, এই দীর্ঘ সময়ও মুসলমানদের খাদ্যের ঘাটতি পড়ে। ক্ষুধায় এক সাহাবা মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে গেলে তিনি রাসুলকে পেটে পাথর বেঁধে ক্ষুধা চেপে রাখতে দেখেন। এই সময় ছোট একটি বকরী এবং সামান্য গম দিয়ে খাবার রান্না হলে দৈবক্রমে সেটি হাজারজন মুসলমান ভরপেট খেয়ে ক্ষুধা নিবৃতি করেন।
যুদ্ধে মুশরিকরা ফিরে গেলে ধৃত ইহুদিদের তাওরাতের আলোকে বিচার করে অধিকাংশ পুরুষদেরকে শিরোচ্ছেদ করা হয়। রায়হানা নামের এক বন্দীকে মুহাম্মদ (সা.)-এর দাসী হিসেবে নিয়োগ মতান্তরে বিয়ে দেয়া হয়।
যুদ্ধে আপাতভাবে সামাণন্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও মূলত এটি ছিল রণকৌশল আর স্নায়ুর যুদ্ধ। ফলে এটি শুধু ইসলামের ইতিহাসই শুধু নয়, সারা পৃথিবীতে সমর কৌশল হিসেবে এটি অবশ্য পাঠ্য হিসেবে ধরা হয়। এই যুদ্ধের ফলেই মুসলমানদের শৌর্য দিকে দিকে আরও ছড়িয়ে পড়ে। তাই, এই যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদগুলিতে হজ্জব্রত, ওমরাহ্, পর্যটকরা নামাজ আদায়কে বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 
 

ধর্ম বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর