ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫০৬

এক ঝাঁক পঙ্গপাল একদিনেই খেতে পারে শত শত টন শস্য!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৩৬ ২ মে ২০২০  

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশে পঙ্গপালের আক্রমণ ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ও ইথিওপিয়ায় ফসলের ক্ষেতে পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য ব্যবহার করা হয় বন্দুক, টিয়ারগ্যাস এবং সাইরেন।

 

এরপর পঙ্গপালের হামলার মুখে পড়ে পাকিস্তান ও ভারত।

 

কিন্তু পঙ্গপাল কী ধরণের ক্ষতি সাধন করতে পারে? আর পঙ্গপাল একটি দেশের জন্য কী ধরণের বিপদ ডেকে আনতে পারে? এসব বিষয় নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা এবং খোঁজ-খবর নেয়া। 

 

পঙ্গপাল এক ধরণের ঘাসফড়িং জাতীয় পতঙ্গ। ডিম থেকে বের হয়ে পরিপূর্ণ একটি পতঙ্গে পরিণত হতে এর তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে।

 

পূর্ণবয়স্ক পতঙ্গে পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত এর পাখা থাকে না। কাজেই এটি তখন উড়তে পারে না, বরং লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।

 

পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গে পরিণত হওয়ার পর এটি রঙ বদলায়। অত্যন্ত দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং বিশাল ঝাঁক তৈরি করে।

 

একেকটি ঝাঁকে এক হাজার কোটি পর্যন্ত পোকা থাকতে পারে এবং দিনে ২০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে এরা। যাত্রা পথে খাওয়ার উপযোগী সব ধরণের ফসল, গাছপালা ধ্বংস করে দিয়ে যায় তারা।

 

একটি এলাকায় তাদের খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই দলবেঁধে সেখান থেকে চলে যায় তারা।

 

বাতাসের গতিপথ যেদিকে থাকে, পঙ্গপাল সেদিকে অগ্রসর হয়। কাজেই তারা সবসময়ই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে যায় - এমন এলাকায় যেখানে বৃষ্টি হয়, অর্থাৎ শস্য উৎপাদনের জন্য আদর্শ জায়গা।

 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা'র তথ্য অনুযায়ী, একটি মাঝারি আকৃতির পঙ্গপালের ঝাঁক যে পরিমাণ ফসল ধ্বংস করতে পারে, তা দিয়ে আড়াই হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব।


জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পঙ্গপালের সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় ২৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের শস্য নষ্ট হয়েছিল।

 

একটি প্রাপ্তবয়স্ক পঙ্গপাল নিজের ওজনের সমান (২ গ্রাম) শস্য একদিনে খেয়ে শেষ করতে পারে। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী পঙ্গপাল যে পরিমাণ ফসল নষ্ট করে, তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো যায় বলে বলছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।

 

এক ঝাঁক পঙ্গপাল শত শত টন শস্য একদিনে খেয়ে শেষ করতে পারে।

 

ধান, গম, ভুট্টার মত দানাজাতীয় শস্য ছাড়াও বহুভোজী এই পোকা অন্যান্য সবজি ও ফলেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে।

 

তবে বংশবিস্তার করতে এবং টিকে থাকতে এই পোকার অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ মে ও জুন মাসে, এই পোকার বংশবিস্তারের আদর্শ সময়। সে সময় তারা তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপে যেতে পারে।

 

মরুভূমির পঙ্গপাল সাধারণত পশ্চিম আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যকার শুষ্ক অঞ্চলের ৩০টি দেশে দেখা যায়।

 

জাতিসংঘ বলছে, বছর দুয়েক আগে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে পঙ্গপালের তিনটি প্রজন্মের বংশবৃদ্ধি নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হয়নি।

 

২০১৯ সালের শুরুর দিকে ইয়েমেন, সৌদি আরব ও ইরানে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল যায়। সেখান থেকে বংশবৃদ্ধি করে পূর্ব আফ্রিকার দিকে যায় তারা।

 

গত বছরের শেষদিকে এরিত্রিয়া, জিবুতি ও কেনিয়ায় দেখা যায় এই পোকা।

 

মিশর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পঙ্গপালের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতিকে 'অত্যন্ত আশঙ্কাজনক' বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।

 

তবে সম্প্রতি টেকনাফে যে পোকাটি পাওয়া গেছে, সেটির বৈশিষ্ট্য দেখে আফ্রিকায় আঘাত হানা ভয়াবহ পঙ্গপাল বলে মনে করছে না বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ।    
 

জনদুর্ভোগ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর