ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৪৪

এক সাইকেলেই ৭৫ বছর

গৌরীপুর প্রতিনিধি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২১ ১৬ মে ২০২১  

গরিব-দুঃখীর সুখ-দুঃখের সঙ্গী তিনি। শত বছর বয়সেও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে সঙ্গী একটি বাইসাইকেল। স্কুলে যাওয়া–আসার জন্য ১৯৪৫ সালে ২৫০ টাকায় সাইকেলটি কেনেন। সেই থেকে জীবনে সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে আছে এটি। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও তা চালিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন জজ বিশপ ওরফে নিমু ডাক্তার। 

 

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার পশ্চিম ভালুকা মহল্লার পল্লিচিকিৎসক তিনি। জজ বিশপ জানান, সাইকেলটি তাঁর ভীষণ শখের। একে খুব যত্ন করে রাখেন। ৭৫ বছরে টায়ার, টিউব ও কিছু ছোট যন্ত্রাংশ ছাড়া বড় ধরনের কোনো মেরামত করতে হয়নি।

 

জজ বিশপের বাবা মৃত ডেনিয়েল বিশপও ছিলেন পল্লিচিকিৎসক। উনিশ শতকের শুরুতে ঘোড়ায় চড়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি। মানুষ তাঁকে সাহেব ডাক্তার বা খ্রিস্টান ডাক্তার বলে ডাকত।

 

ছাত্রজীবনে বাবা ডেনিয়েলের কাছেই পল্লিচিকিৎসা শিক্ষার হাতেখড়ি জজের। বাবার মৃত্যুর পর পল্লিচিকিৎসকের কোর্স সম্পন্ন করে একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সাইকেল চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নামমাত্র ফিতে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। স্টেশন রোড এলাকায় রয়েছে ছোট্ট চেম্বার। সেখানে প্রতিদিন বিকেলে রোগী দেখেন। স্থানীয় দরিদ্ররা আসেন এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে।

 

জজ গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর উচ্চবিদ্যালয় থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে জাগরণী ক্লাবের সভাপতি ছিলেন তিনি। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে সত্তরের দশকে পৌরশহরে জাগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছুয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নিজ এলাকায় পশ্চিম ভালুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে গৌরীপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনি রয়েছে তাঁর।

 

ভালুকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান জানান, বিশপ নিমু ডাক্তার খ্রিস্টধর্মের একজন প্রচারক। পাশাপাশি পারিবারিক পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। অনেক সময় বিনা মূল্যেও সেবা দিয়ে থাকেন।

 

গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, নিমু ডাক্তার সাইকেলে চড়ে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। অমায়িক আচরণের মানুষটি এ বয়সেও যে পরিশ্রম করছেন, তা সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী।’
 

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর