ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৭৬

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৯ ২১ ডিসেম্বর ২০২৩  

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপ-ধরনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ এটি ‘দ্রুত ব্যাপকভাবে বিস্তার’ লাভ করছে। সম্প্রতি জেএন.১ নামে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষের মধ্যে এখনো এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত টিকার মাধ্যমেও এর থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

 

কিন্তু সংস্থাটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, এই শীতকালে কোভিড ও অন্যান্য সংক্রমণ বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে ফ্লু এবং মাঝারি ঠান্ডা ও নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগ বাড়ছে। যে ভাইরাসের কারণে কোভিড হয় সেটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং অনেক সময় এর কারণে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ব জুড়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করেছে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জেএন.১ ভ্যারিয়েন্টসহ বর্তমানে ওমিক্রনের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করছে। যদিও এগুলোর মধ্যে কোনোটিই এখন পর্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়নি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন বলছে, জেএন.১ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এই ভ্যারিয়েন্টটি বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভ্যারিয়েন্ট।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৫-২৯ শতাংশ সংক্রমণ এখন এর কারণে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা এনএইচএস বলছে, ল্যাবে ধরা পড়া কোভিড পজিটিভ ঘটনার মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ হচ্ছে জেএন.১ এর কারণে। সংস্থাটি বলছে, এই তথ্য এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলো সম্পর্কিত তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করা চালিয়ে যাবে তারা।

 

কী জানা যাচ্ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, জেএন.১ সব এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, কারণ এর একটি অতিরিক্ত স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। যদিও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি বিএ.২.৮৬ ভ্যারিয়েন্ট থেকে, তবে ওই ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি দ্রুত ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ধারণা করা হচ্ছে যে, এ ভ্যারিয়েন্টটি অন্যান্য ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সাথে সাথে সার্স-কভ-২ (করোনাভাইরাসের)-এর সংক্রমণ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যে দেশগুলোতে শীতকাল শুরু হচ্ছে সেখানে এর সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

 

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, টিকা দেয়ার ফলে যে দেহে সুরক্ষা তৈরি হয়েছে সেটি ভাঙতে এই জেএন.১ ভ্যারিয়েন্ট কতটা সক্ষম, সে সম্পর্কিত তেমন কোনো নথি-প্রমাণ নেই। এছাড়া মানুষ আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় এটি আরো বেশি অসুস্থ করে তোলে কিনা তারও কোনো তথ্য নেই। ডব্লিউএইচও বলেছে, মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব কেমন হয় তা বুঝতে আরো বেশি গবেষণা করা দরকার। কারণ কোভিড আক্রান্ত হয়ে মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য দেয়ার হার বিভিন্ন দেশে নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।

 

সংক্রমণ ও মারাত্মক রোগ ঠেকাতে যা করণীয়
সংক্রমণ এবং মারাত্মক রোগ ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে :

- বদ্ধ ও ভিড় রয়েছে এমন জায়গায় মাস্ক পরা
- হাঁচি ও কাশি ঢেকে দেয়া
- নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা
- কোভিড ও ফ্লু এর টিকা নেয়া বিশেষ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলে অবশ্যই টিকা নেয়া
- অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকা
- উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো

 

করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা জানি আমরা

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। করোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, পৃথিবীতে এর বিস্তার শুরু ২০২০ সালের শুরুতে, জানুয়ারি ২০২১ নাগাদ বিশ্বের ১৯১ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

 

এর আগে ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল, সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস।

 

এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন- ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্যময় ভাইরাস’ ইত্যাদি। তবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

 

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী 

# রেসপিরেটরি বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।

# এই ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে।

# সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।

# সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।

 

# শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

#যদিও পরে ভাইরাসের ধরনে পরিবর্তনের সাথে সাথে উপসর্গ প্রকাশের সময়েও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

# মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের।

# তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ।

# শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর ও ফ্লুয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর