ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৭১

করোনায় ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর্মীর বিকল্প রোবট!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০২ ১৭ এপ্রিল ২০২০  

রোবটকে এতকাল চাকরিচ্যুতির কারণ ও উচ্চাকাঙ্খী ক্ষমতাধর হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু  মারাত্মক ব্যাধী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন, কার্যকর ও সংক্রমণবিরোধী চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করছে রোবট। এএফপির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

 

চীনের উহান শহরে যে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হয়েছিল, সেখানকার একটি হাসপাতালে রোগীদের দেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয় একদল রোবট। সেখানে রোগীর খাবার দেওয়া, তাপমাত্রা মাপা বা যোগাযোগের মতো কাজে রোবট ব্যবহৃত হয়। এমন একটি রোবটের নাম ক্লাউড জিঞ্জার। এটি তৈরি করেছে ক্লাউড মাইন্ডস। বেইজিং ও ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

 

ক্লাউড মাইন্ডসের প্রেসিডেন্ট কার্ল ঝাও মানুষসদৃশ রোবট তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি দরকারি তথ্য দিতে পারে, কথোপকথন চালাতে পারে, নেচে বিনোদন দিতে পারে এবং ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। স্মার্ট ফিল্ড হাসপাতালের পুরোটাই রোবট দিয়ে পরিচালনা করা হয়। ছোট একটি মেডিকেল টিম দূর থেকে ফিল্ড হাসপাতালের রোবটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। রোগীদের এ ক্ষেত্রে হাতে বিশেষ ব্যান্ড পরতে হয়, যা থেকে রক্তচাপসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

 

ছোটো এ ক্লিনিকে মাত্র কয়েক দিন রোগীকে রাখা হয়। তবে ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার করে কীভাবে রোগী ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে এটি ধারণা দেবে।

 

থাইল্যান্ড, ইসরায়েলসহ আরও কয়েকটি দেশের কিছু হাসপাতালে রোগীদের চিকিত্সাসেবায় রোবটের ব্যবহার হতে দেখা যায়। ভিডিও কনফারেনে্সর বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে রোবট। এর বাইরে কিছু প্রচলিত পরীক্ষাও করে থাকে রোবট চিকিৎসক।

 

সিঙ্গাপুরের আলেকজান্দ্রা হাসপাতালে ‘বিমপ্রো’ নামের একটি রোবট ব্যবহৃত হতে পারে, যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে খাবার ও ওষুধ দেবে। আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগে রোবট ব্যবহারের কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর ঘরের বাইরে থেকে কম্পিউটার ব্যবহার করে রোবট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মী। স্ক্রিন ও ক্যামেরা ব্যবহার করে দূর থেকেই কথোপকথন চালানো যাবে।

 

আলেকজান্দ্রা হাসপাতালের হেলথ ইনোভেশন পরিচালক আলেকজান্ডার ওয়াইপ বলেন, রোবট ব্যবহার করলে আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে ষ্পর্শের সংখ্যা কমানো যায়। এতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি কমে।


যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, রোবট বা যন্ত্র ব্যবহার করে ভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়টি স্ক্যান করে দেখা যেতে পারে। এর বাইরে হাসপাতালে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ছড়ানো ঠেকাতে বিভিন্ন হল, দরজার হাতলসহ নানা কাজে রোবটের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ঘর জীবাণুমুক্তকরণ রোবটের চাহিদা বাড়ার কথা জানিয়েছে। তাদের লাইটস্ট্রাইক রোবট ইতিমধ্যে ৫০০টি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে।

 

জেনেক্সের মিডিয়া সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক মেলিন্ডা হার্ট বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা অনুরোধ পাচ্ছি। হাসপাতাল ছাড়াও জরুরি সেবাকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, হোটেল, সরকারি সংস্থা ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছ থেকেও অনুরোধ আসছে।

 

ফ্রান্সের শার্ক রোবোটিকসের পক্ষ থেকেও ফরমাশ বাড়ার কথা বলা হয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কনজুমার টেকনোলজি গবেষণার পরিচালক লিজলে রোবাগ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে রোবোটিক উদ্ভাবনের গতি বেড়েছে। আমরা এমন এক সময়ে আছি, যেখানে এ প্রযুক্তি প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেন্সর ও অন্যান্য সুবিধাযুক্ত রোবটের দাম বেশি হওয়ার কারণ তাতে ইন্টারনেট সুবিধাও থাকে।

 

অস্ট্রেলিয়ায় ভিড় পর্যবেক্ষণ করতে সেন্সর ও ক্যামেরা যুক্ত ড্রোনের উদ্ভাবন বাড়ছে। সাউথ অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক কানাডার ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ড্রাগনফ্লাইয়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে। মানুষের ভিড় পর্যবেক্ষণ করে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে। দূর থেকে মানুষের নাড়ির গতি, তাপমাত্রা, হাঁচি-কাশি শনাক্ত করার জন্য কম্পিউটার অ্যালগরিদম তৈরি করছে দলটি।