ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৭১

করোনায় বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যু

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৩৬ ১৮ মার্চ ২০২০  

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ (আইইডিসিআর) এ খবর নিশ্চিত করেছে। প্রাণঘাতী দেশে মৃত্যু প্রথম ব্যক্তি তিনি। সত্তরোর্ধ এ ব্যক্তি বিদেশফেরত নন। অন্য একজন আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার কারণে সংক্রমিত হয়েছিলেন।
নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তার কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসে সমস্যা এবং হার্টের অসুখ ছিল। হার্ট সমস্যার কারণে সম্প্রতি তাকে (স্টেনটিং) রিং পরানো হয়। গেল কয়েকদিন হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার শনাক্ত হওয়া দু'জন করোনাভাইরাস আক্রান্তের মধ্যে একজন ছিলেন এ ব্যক্তি। এছাড়া নতুন চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের করোনাভাইরাসের উপসর্গ মৃদু হলেও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে। একজন এর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
নতুন করে যে চারজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। চারজন নতুন রোগীর একজন পূর্বে আক্রান্ত এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্য। বাকি তিনজন সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। ওই তিনজনের মধ্যে দু'জন ইতালি এবং একজন কুয়েত থেকে ফিরেছেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা নিয়ে অভিযোগ
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের পরীক্ষা না করার বিষয়ে বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠে এসেছে স্থানীয় গণমাধ্যমে। এমন অভিযোগ উঠেছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলেও তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা র কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে স্বীকার করেন 'প্রকাশ্যেই' অনেক ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা অনেকদিন ধরেই হচ্ছিল। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে, হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। 
তবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কিট ঢাকাতেই জমা রয়েছে বলে জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, আমরা জানি, এ ভাইরাস পরীক্ষা করার কিটের সঙ্কট সারাবিশ্বেই রয়েছে। আপাতত আমরা ঢাকাতে কিট জমা করছি। যখন যেই এলাকায় প্রয়োজন, তখন সেখানে আমরা এ কিট সরবরাহের চেষ্টা করছি।
এ কিটের বড় একটি অংশ চীন থেকে আসত। বর্তমানে দেশটির অনেক জায়গা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ভবিষ্যতে কিটের সঙ্কট থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন আইইডিসিআর পরিচালক। তিনি বলেন, এ মুহুর্তে কিটের সঙ্কট নেই। তবে আমাদের আরো প্রয়োজন আছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কী?
৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। সেসময় তিনজন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানায় আইইডিসিআর। এর পর ১৪ মার্চ শনিবার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো দু'জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানান।
পরবর্তীতে সোমবার তিনজন এবং মঙ্গলবার আরো দু'জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়। আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আক্রান্তদের সবাই বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন করতেই হবে। সেই নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে যে ক'জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের পরিবারের বাইরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে এটি ছড়িয়েছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছি। যাদের নিউমোনিয়া হয়েছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা রয়েছে, তাদের নমুনা নিয়ে এসে আমরা দু'ভাগে - নিয়মিত কোভিড-১৯ এর এবং নমুনার পরীক্ষা পরিচালনা করি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশে এখন যারা করোনা আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের একাধিক অসুস্থতা রয়েছে।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীরা যেসব হাসপাতালে যান, সেসব হাসপাতালের চিকিৎসক এবং ওই রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবে, তাদের মাধ্যমেও ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিধায় সতর্ক থাকার কথা জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর