ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১১১২

জেনে নিন বাঁচার উপায়

করোনা ভাইরাস কেন এত ভয়ংকর?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৯ ২৪ জানুয়ারি ২০২০  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে যে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি কোনো একটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ছড়াতে নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে এটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় মিউটেশন।  তাই এ ভাইরাস অল্প দিনের মধ্যে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাইরাসটির প্রকৃতি এবং কিভাবেই তা রোধ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন তারা। সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) বা ইবোলার মতো নানা ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাসের খবর প্রায়শই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। করোনা ভাইরাস হচ্ছে সবশেষ সংযোজন।
 

করোনা ভাইরাস কী? 

করোনা একটি সংক্রামক ভাইরাস, যা এর আগে কখনও মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এর আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এর অনেক প্রজাতি আছে।  কিন্তু এর মধ্যে ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যে ‘মিউটেট করছে’। অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। 
 

কীভাবে ছড়ায়?

বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, এ ভাইরাস খুব দ্রুত একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে পারে। এটি মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
এক দশক আগে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়। সেটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস ছিল। এতে আক্রান্ত হয় ৮ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া ২০১২ সালে আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ মিডল ইস্টার্ন রেস্পিরেটরি সিনড্রোমে (মার্স) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের। 
 

লক্ষণ কী?

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ৫ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। এর পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এর এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।

কতটা বিপজ্জনক?

এ ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক সেটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত করা যায়নি। তাই এটি ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনও স্পষ্ট নয়।
 

যেভাবে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এ রোগের সূচনা। গেল ৩১ ডিসেম্বর এ শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে চীন কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি এতে প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
ঠিক কীভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলছেন, কোনো প্রাণী এ ভাইরাসের উৎস ছিল। সেটি থেকে প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে ঢুকেছে। পরে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।
সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মার্স ভাইরাস ছড়ায় উট থেকেও। এর সঙ্গে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল, এমন লোকদের সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো।
কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে জ্যান্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ ও সাপ বিক্রি হতো। এগুলোর কোনো একটি থেকে নতুন এ ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।
ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই ব্যক্তি উহানে গিয়েছিলেন।

এর চিকিৎসা কী?

ভাইরাসটি নতুন, তাই এখন পর্যন্ত এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। এছাড়া এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

এ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষার উপায় কী?

একমাত্র উপায় হলো যারা এরই মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় বলেছেন, হাত সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বার বার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে।
তিনি বলেন, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন, তা হলে মুখোশ পরুন। আর নিজে অসুস্থ না হলেও অন্যের সংস্পর্শ এড়াতেও মুখোশ পরুন।

উল্লেখ্য, উহান শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী নিজেরাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।