ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪০৩

করোনা: যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অভিনয়শিল্পীরা 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৩৩ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা থমকে দিয়েছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। নাটক-সিনেমার যে চরিত্রগুলো আমাদের হাসায়-কাঁদায়, যাদের নিপুণ অভিনয় কলায় আমরা চলে যাই অন্য কোনও ভূবনে। মহামারির নতুন বাস্তবতায়, এ কঠিন সময়ে অভিনয়শিল্পীদের জীবনের গল্পগুলো কেমন ছিল?

এ প্রসঙ্গে দেশের সরকারি একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ অভিনয়শিল্পীদের জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। একজন চিত্রগ্রাহক, পরিচালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পিপিই পরে কাজ করার সুযোগ আছে। কিন্তু যিনি অভিনয় করেন, তার এ সুযোগটি নেই। তাই উনার ঝুঁকি অনেক বেশি।

একটা অভিনয় শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্য আরো পেশা গড়ে ওঠে। যেমন-লাইটম্যান, প্রোডাকশন বয়, কস্টিউম, সেট। তাদের কাজের পরিধি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন খুব সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। খুব জরুরি কিছু যেগুলো আটকে ছিল অথবা জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনের কাজ এসব হচ্ছে। সেখানে যত কম সংখ্যক লোককে আনা যায়, সেটি করা হচ্ছে। যেমন- আগে যেখানে আটজন লাইটম্যান থাকতেন, এখন সেখানে চারজন থাকছেন। প্রোডাকশন বয় যেখানে দুইজন থাকতেন, সেখানে একজন কাজ করছেন। এতে একটা বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। যা আসলে শঙ্কাজনক।

শাহাদাৎ হোসেন বলেন, লোক সমাগম কমাতে গল্পের চরিত্র কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রধান চরিত্রগুলোর বাইরে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বাদ দেয়া হচ্ছে। এতেও অনেকে কর্মহীন হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পৃথিবীর স্বাভাবিকতা ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

অপরদিকে করোনাকালে অভিনয় সংক্রান্ত অনেক অনলাইন ক্লাস হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। ওই ক্লাসগুলোতে শুধু শারীরিক দূরত্ব ছিল। কিন্তু মানসিক উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল বলে মনে করেন এ গুণী অভিনেতা।

করোনাকালীন অভিনয় শিল্পীদের বিষয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ।’ এ সংগঠনের সভাপতি প্রথিতযশা অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, তাদের সংগঠনে প্রায় ১২০০ সদস্য আছে, যার মধ্যে ৪০০ সদস্য প্রাণঘাতী ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত সদস্যদের হাসপাতাল সুবিধাসহ সবধরনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। যাদের প্রয়োজন এমন শিল্পীদের এখন পর্যন্ত চারবার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, এ সহায়তা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি বিশেষ মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একজন শিল্পী তার সমস্যা জানাতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়েছে, যেন পীড়িত শিল্পী নিজের প্রয়োজন প্রকাশ করতে কোনও কুণ্ঠা বোধ না করেন।

শক্তিমান এ অভিনেতা বলেন, এ দুর্দিনে প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনে সাহায্য করেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, স্বচ্ছল শিল্পীবৃন্দ, দেশের বাইরে থাকা শিল্পীবৃন্দ, মিনা বাজার ও স্বপ্ন। একটি টিভি চ্যানেল বড় স্পন্সরশিপ শিল্পীদের সহায়তায় দিয়েছেন। 

অভিনেতা ও ডাবিং ডিরেক্টর তাপস মৃধা বলেন, অন্য সব পেশার মতো করোনাকালীন বেশ কিছুদিন টিভি চ্যানেলের কাজ বন্ধ ছিল। পরে বাসায় বসেই কাজ শুরু করি। ক্লায়েন্টকে অনলাইনে ভয়েস স্যাম্পল, ক্লোজড ভিডিও শট পাঠাই। এভাবেই ছোট পরিসরে কাজ করেছি। তবে এখন সতর্কতার সঙ্গে চ্যানেলগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে।

করোনাকালীন কাজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনার শুরুতে গ্রামে চলে যাই। সেই সময় বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রামে থেকেই সবার সঙ্গে অনলাইনে মিটিং, রিহার্সাল এবং অডিও/ভিডিও’র কিছু কাজ করলাম।
তাপস বলেন, যেহেতু সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অভিনয় সম্ভব নয়, তাই শুটিং বন্ধ থাকাকালীন সেসব শিল্পী ও কলাকুশলী, যাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম এ অভিনয় শিল্প তারা খুবই কষ্টে ছিলেন। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য কেউ তৈরি ছিলেন না।

নিজের প্রতিষ্ঠান মৃধা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এমআইবি) সম্পর্কে তিনি বলেন, এমআইবি গত দু’বছর ধরে ভয়েস এক্টিং, চিলড্রেনস পারফর্মেন্স, পাপেট নিয়ে নানাধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চিলড্রেন কার্নিভালের আয়োজন করেছে। করোনাকালীন প্রতিষ্ঠানের সব প্রশিক্ষণ অনলাইনে করা হয়েছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশেরই সুফল। আর এ সময়ে সবাই ঘরে থাকায় বিভিন্ন কোর্সে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। অনেকে ব্যস্ততার জন্য যে প্রশিক্ষণগুলো ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অতীতে করতে পারেননি, তারা এবার সেটি অনলাইনে করেছেন।

ডাবিং ডিরেক্টর বলেন, এছাড়া শিশুরা ঘরবন্দী থেকে যে মানসিক পীড়ায় ছিল, তারা তাদের কোর্সগুলোতে ভীষণ আনন্দ পেয়েছে। শিশুদের প্র্যাকটিস ক্লাস এখনও সপ্তাহে একদিন অনলাইনে চলছে। এছাড়া, কোর্স ফি থেকে প্রাপ্ত ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের দেয়া হয়েছে। এ কঠিন সময়ে সুস্থ থেকে কাজ করে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

এমআইবি’র শিক্ষার্থী খোন্দকার সোহেল রানা বলেন, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ভয়েস আর্টের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার। কিন্তু নিজের কাজ করে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। এবার সাধারণ ছুটির সময় আমি অনলাইনে কোর্সটি সম্পন্ন করেছি। ভবিষ্যতে অনলাইন প্রশিক্ষণ চালু রাখলে আমাদের মতো অন্য পেশার মানুষও নিজের আগ্রহের জায়গাগুলোতে তা নিতে পারবে।

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর