ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৯৬৭

কালো মুরগির মাংস খেলেই সব অসুখ উধাও!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৮ ৩ অক্টোবর ২০২০  

মুরগির মাংস তো সবাই খেয়েছেন! কিন্তু কখনও কি কড়কনাথ প্রজাতির মুরগির মাংস খেয়েছেন? নিশ্চয়ই নয়? তাহলে একবার খেয়ে দেখতেই পারেন। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টি গুণেও ভরপুর। এর পালক থেকে শুরু করে ঠোঁট, পা, নখ, ঝুঁটি, চোখ, পালক-সবই কালো। 

 

এমনকি এ মুরগির মাংস ও হাড়ের রঙও কালো। যে কারণে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। পচা মাংস ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু জানেন কি, পৃথিবীর সব প্রজাতির মধ্যে এ কুচকুচে কালো বর্ণের মুরগিই সবচেয়ে দামি। উপকারিতার দিক থেকে অনন্য। 

 

ওষুধি গুণ সম্পন্ন এর মাংসে চর্বি নেই বললেই চলে। বরং রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্যগুণ। এবার নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? তবে চলুন জেনে নেয়া যাক কড়কনাথ মুরগি মাংস খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

 

কড়কনাথ কী? 
এ প্রজাতির মুরগি ইন্দোনেশিয়ায় প্রথম পাওয়া যায়। সেখানে এর নাম ‘অ্যায়াম কেমানি'। ভারতের মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীরা দেশটি থেকে এটি নিয়ে এসে হাইব্রিড প্রজাতি সৃষ্টি করেন। এরপর গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ শুরু হয়। এ অঞ্চলে এর নাম হয় ‘কড়কনাথ'। গ্রাম বাংলায় এটি কালো মুরগি বা ব্ল্যাক চিকেন হিসেবে পরিচিত। 

 

মধ্যপ্রদেশে একে 'কালি মাসি'-ও বলা হয়। এ মুরগির সব অংশই কুচকুচে কালো বর্ণের। এমনকি ডিম পর্যন্তও কৃষ্ণ রঙের হয়। তবে বাংলায় এ প্রজাতির মুরগির ডিম মূলত সোনালী কালারের হয়। সাধারণ মুরগির থেকে এর লড়াই করার ক্ষমতা অনেক বেশি। 

 

এটি কোথায় পাওয়া যায়? 
মূলত মধ্যপ্রদেশে কড়কনাথ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ভারতবর্ষের বহু রাজ্যে এ প্রজাতির চাষ শুরু হয়েছে। যেমন - সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা ও কুলপিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ মুরগির খামার রয়েছে। কর্ণাটক, কেরলা, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশাতেও তা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ, আমেরিকা, চীনেও পাওয়া যায় কড়কনাথ। চীনে এর নাম সিল্কি-নেটিভ। 

 

কড়কনাথের দাম 
বর্তমানে এ মুরগির (একটি) দাম ২০০০-২৫০০ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে কম দাম হলো কেজি প্রতি ১০০০-৮০০ টাকা। কড়কনাথের একটি ডিমের দাম ৫০ টাকা। 

 

নিউট্রিশন ভ্যালু 
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য মুরগির তুলনায় এ জাতের মুরগিতে পুষ্টি গুণ বেশি। ফ্যাটের পরিমাণ অত্যন্ত কম। প্রায় নেই বললেই চলে। যে কারণে চিকিৎসকরা ডায়েটে এ মাংস খাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। 

 

প্রতি ১০০ গ্রাম কড়কনাথ মুরগিতে রয়েছে- 
প্রোটিন - ২৫ শতাংশ 
ফ্যাট - ১ শতাংশেরও কম 
কোলেস্টেরল - ১৮৫ মিলিগ্রাম 
লিনোলিক অ্যাসিড - ২৪ শতাংশ 

 

এছাড়া ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২, ভিটামিন-সি এবং ই, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও আয়রন থাকে। কড়কনাথে ১৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, যার মধ্যে ৮টা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। 

 

স্বাস্থ্য উপকারিতা 
# কড়কনাথে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন উপাদান যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
# এ প্রজাতির মুরগিতে রয়েছে ক্যারনোসিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। 

 

# মারণঘাতী ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এর মাংস খুবই সহায়ক। গবেষকরা জানাচ্ছেন, কড়কনাথে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। পাশাপাশি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 

 

# হার্ট সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে ডায়েটে অবশ্যই রাখুন এ মুরগি। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম। ফলে এটি খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। একইসঙ্গে ভিটামিন, আয়রন ও খনিজ উপাদানগুলোর উপস্থিতির ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। সেইসঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। 

 

# কড়কনাথের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই ডায়েটে অবশ্যই রাখুন এ প্রজাতির মাংস। 

 

এছাড়া 
# রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি রোধ করে। 
# হাড় শক্তিশালী করে। বিশেষত, নারীদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

 

# ত্বকে পুষ্টি যোগায়। 
# ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে সহায়ক। 
# মাথাব্যথা ও হাঁপানি রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।