ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ পৌষ ১৪৩১
good-food
১৩৭৭

কুয়েত থেকে দেশে ফেরার আশঙ্কায় আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৪৪ ১১ জুলাই ২০২০  

নিজ দেশ থেকে অভিবাসী সংখ্যা কমিয়ে আনতে প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে কুয়েত সরকার। ওই খসড়া আইনে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাত্র ৩% কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ আইন পাস হলে দেশটিতে অবস্থানরত আড়াই লাখের বেশি অভিবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হতে পারে। 
সবশেষ হিসেব অনুযায়ী, কুয়েতে মোট জনসংখ্যা ৪৩ লাখ। এর মধ্যে ৩০ লাখ অভিবাসী। শতাংশের হিসাবে যা প্রায় ৭০%। তাই দেশটির সরকার অভিবাসীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ৩০% শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য রক্ষা করায় এর লক্ষ্য।
সেই উদ্দেশে কুয়েতের পার্লামেন্টে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত খসড়া কোটা বিল অনুমোদন করে একটি কমিটি। তাতে নানা দেশের অভিবাসীদের বিভিন্ন কোটায় ভাগ করে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
কোটা অনুযায়ী, কুয়েত সরকার মাত্র ৩% বাংলাদেশিকে সেদেশে জায়গা দিতে চায়। ফলে আড়াই লাখেরও বেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হবে। কুয়েতি গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচার হতে দেখেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। স্বভাবতই প্রস্তাবিত বিলটির আইনে পরিণত হওয়া নিয়ে আতঙ্কে আছেন সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীরা।
প্রবাসী কর্মী শাহ করিম বলেন, কুয়েতে চাকরির বেতন, কাজের পরিবেশ খুব ভালো। আমার টাকার ওপর পুরো পরিবার চলে। এখন যদি চলে আসতে হয়, আমার পরিবার কিভাবে চলবে? আমরা তো এমন পরিবেশ পাব না। বাংলাদেশের লাখ লাখ অভিবাসীর কী হবে?
এক হিসাবে, কুয়েতে বর্তমানে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই বিভিন্ন অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ পেশায় নিয়োজিত। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, গাড়ি চালানো, হোটেল বয় ইত্যাদি পেশায় এদেশি শ্রমিকদের বেশি দেখা যায়।
তবে এসব অভিবাসী ছাড়া কুয়েত সরকার চলতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছেন এস এম আবুল কালাম। তিনি বলেন, কুয়েত সরকারের এ খসড়া আইন অবাস্তব। দেশটি চাইছে সরকারি চাকরি, ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী ইত্যাদি দক্ষ কর্মসংস্থানের জায়গাগুলোয় তাদের নাগরিকদের বসাতে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার কাজ, নির্মাণের কাজ, গাড়ি চালানোর কাজ, দোকানের কর্মচারীর কাজ তো তারা করবে না। এসব অভিবাসী পাঠিয়ে দিলে তাদের চলবে কিভাবে?
তার মতে, দেশটিতে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় কট্টরবাদী বিরোধীরা অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারকে চাপে দিচ্ছে। তিনি জানান, কুয়েতের সরকার নীতিগতভাবে অভিবাসী কমানোর বিষয়ে সম্মত। তবে দেশটিতে কী পরিমাণ অভিবাসী দরকার সেই সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পার্লামেন্টের কমিটি এখনও প্রস্তুত করতে পারেনি। সেই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে আদৌ কত সংখ্যক অভিবাসী থাকবেন। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি আরও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। 
কুয়েত সরকার বাংলাদেশের অদক্ষ কিংবা স্বল্প-দক্ষ শ্রমিকদের এত বিপুল হারে ফেরত পাঠাতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রামরু চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি জানান, যদি বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে তারা আসলেই ফেরত পাঠায়, তাহলে সরকারকে তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য এখন থেকেই কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।ৎ
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, কুয়েতে বাংলাদেশিরা যে ধরনের কাজ করেন, সেই শ্রমিকদের তারা গণহারে ফেরত পাঠাতে পারবে কি না আমার সন্দেহ আছে। এরপরও দেশটির সরকার প্রচুর লোক ফেরত পাঠাবে। তাই বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ওপর। রামরু চেয়ারম্যান বলেন, দক্ষ জনবলের চাহিদা এক দেশে না হোক আরেক দেশে থাকেই। দক্ষ শ্রমিককে মূল্যায়ন করা হয় অনেক বেশি। তাই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে হবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালের পর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে কুয়েত। তখন থেকে এদেশের রেমিটেন্স আয়ের একটি বড় অংশ আসে সেদেশ থেকেই।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ কুয়েত থেকে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স আয় হয়েছে। এখন দেশটি এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পাঠিয়ে দিলে রেমিটেন্স আয়ের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব মনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন, কুয়েত বা অন্য যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার কারণে যদি বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত আসতে হয়, তাহলে দেশের ভেতরেই তাদের পুনর্বাসন না হলে অন্য দেশগুলোয় পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ফিরে আসাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, যেন তারা দেশের ভেতরে বা বাইরে ভালো কাজ পেতে পারে। এজন্য কাজের নতুন বাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায়, সেই সঙ্গে উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অভিবাসীদের কমিয়ে আনতে চাইছে কুয়েত সরকার। 
তবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটিতে এখন থেকেই নতুন করে আর কোনও বিদেশিদের কাজ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে সম্প্রতি সেখানে নতুন ভিসায় আসা বাংলাদেশের অন্তত ১৭শ’ কর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
যাদের কুয়েতে এসে কাজ করার প্রক্রিয়া চলছিল, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। যারা এখন কাজ করছেন, তাদের অনেকের কাজের মেয়াদ নবায়ন করা হয়নি। আবার ছুটি কাটাতে যারা কুয়েত থেকে দেশে এসেছেন, তারা কবে ফিরতে পারবেন। কাজ আদৌ ফিরে পাবেন কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে।