ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৯৩

কৃষকরা কী শুধু ঠকেই যাবেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫০ ৯ ডিসেম্বর ২০১৯  

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ও জিনিসপত্রের বাজার এখন একশ্রেণির অসাধু ও অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া ব্যাপারিরাই সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।

অতীতে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনও সুযোগ বাংলার মাটিতে  ছিল না, এখনও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। শীত মৌসুমে শাক-সবজিতে ভর্তি বাজার। কিন্তু সেসব সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই।

কৃষিক্ষেতে যে মূল্যে সবজি বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীতে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে সেটা হয় ৩/৪ গুণ।  সরকারের এত প্রতিশ্রুতি, এত প্রস্তুতি, এত আন্তরিক প্রচেষ্টা পেঁয়াজের দাম কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

পর্যবেক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, এবারের পেঁয়াজ কেলেঙ্কারিতে জনগণের পকেট থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা তথাকথিত সিন্ডিকেটধারীরা হাতিয়ে নিয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে এমন এক কর্তৃপক্ষের হাতে, যেখানে নেই কোনও নিয়ম-নীতি, শৃঙ্খলা তথা সু-ব্যবস্থাপনা।

কাজেই সাধারণ মানুষের তেমন কোনও উপকারে আসছে না আমদানিকৃত নিত্যপণ্যটি। পেঁয়াজ ওঠার ভরপুর মৌসুমে দাম নাগালের বাইরে। তা হলে জনগণ কিভাবে প্রত্যাশা করবে আদৌ এর মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে?

সাধারণ ক্রেতারা শুধু ঠকেই যাচ্ছে। আর কৃষকের ঠকার বিষয়টি তো ভাগ্যের লিখনে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে অনাহার- অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটাতে হয়।

উৎপাদন বেশি হলেও লাভের পরিবর্তে লোকসানের ভাগিদার হতে হয় কৃষকদের। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে তারা এখন ধান উৎপাদন করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। এর উৎপাদন খরচ এতটাই বেশি যে, তারা আর ধান উৎপাদন করে ক্ষতিগ্রস্থ হতে চাচ্ছে না।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, উত্তরাঞ্চলে পাকা ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও তাদের মজুরি আকাশচুম্বি। সব মিলিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সরকার মৌসুমভিত্তিক যে ধান-চাল সংগ্রহ করে, এর সুফল ভোগ করেন কল মালিকরা। পেঁয়াজ ও আলু ওঠার মৌসুমে এ দুটি পণ্য যে দামে বিক্রি হয়, তাতে উৎপাদন খরচ ওঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদনে  আগ্রহ প্রকাশ করে না।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদার তিনভাগের একভাগ আমদানি হয় ভারত থেকে। এ বছর প্রতিবেশি দেশটিতে বন্যার কারণে এর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে আমাদের দেশে ভয়াবহ পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

নিত্যপণ্য-দ্রব্য বিশেষ করে পেঁয়াজসহ সব ধরনের সবজি ও ধান-চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে অসাধু ব্যবসায়ী তথা এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আধিপত্য থামাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা।

প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সেই অসাধু ব্যবসায়ী চক্রকে প্রতিহত করতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়াগুলো বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলে কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হবে।

উৎপাদন মৌসুমে কৃষক যাতে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করতে পারে সেই সুবিধা সরকারি সু-ব্যবস্থাপনায় করতে হবে। চাল-পেঁয়াজ তথা কৃষি পণ্যের সংকট এড়াতে হলে কৃষক বান্ধব বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে বছরব্যাপী বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।

সবচেয়ে বড় যে জিনিসটির প্রয়োজন তা হলো কঠোর আইনের প্রয়োগ। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণ উভয়কেই সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: মোহা: জালাল উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, উত্তরা কমার্স কলেজ

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর