ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২২৩০

কোন্ চিনি খাবেন, সাদা না বাদামি?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৩:২৭ ২৫ আগস্ট ২০২১  

চা বা কফির সঙ্গে সাদা চিনির বদলে অনেকে বাদামি চিনি বা ব্রাউন সুগার খান। অনেকেরই ধারণা, স্বাস্থ্যের নিরিখে সাধারণ চিনির চেয়ে বাদামি চিনি খাওয়া ভাল। কথাটা কতটা ঠিক?

 

দুই চিনির পার্থক্য

 

দুই চিনির র‌ংই শুধু আলাদা নয়, রয়েছে আরও অনেক পার্থক্যও। বাদামি চিনিতে থাকে গুড়ের উপাদান। এ ছাড়াও এই চিনিতে কিছু পুষ্টিকর উপাদান এবং খনিজ থাকে, যা সাদা চিনিতে থাকে না। এর মধ্যে অন্যতম পটাসিয়াম।

 

লাল বা বাদামি চিনি সরাসরি আখ থেকে তৈরি অপরিশোধিত চিনি। এ চিনিতে থাকে আখের সব উপাদান। যেমন - শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারী অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থায়ামিন, রাইবোফ্লেবিন, ফলিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি।

 

এ ছাড়াও সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি থাকে বাদামি চিনিতে। ফলে পুষ্টিকর উপাদানের নিরিখে সাদা চিনির চেয়ে বাদামি চিনি কিছুটা এগিয়ে থাকবে।

 

কিন্তু ক্যালোরির প্রশ্নে কোন চিনি এগিয়ে থাকবে?

 

দেখা গিয়েছে, দুই চিনিতেই ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় সমান। অর্থাত্‍ কেউ যদি সাদা চিনি বাদ দিয়ে বাদামি চিনি খান এবং মনে করেন, তাতে ওজন কমানো সম্ভব— তা মোটেই ঠিক নয়।

 

১ চামচ সাদা চিনি এবং বাদামি চিনিতে যথাক্রমে ক্যালোরির মাত্রা ১৬ এবং ১৭।



বাদামি বা লাল চিনি খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে রাখা দরকার :

 

১. প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লাল চিনি খেলে হাড় শক্তপোক্ত হয়। সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।

২.  আখের অ্যাটিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ভেতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়।

৩.  লিভার সুস্থ রাখে।

৪.  জন্ডিসের প্রকোপ কমায়।

৫. কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করে।

৬. আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৭. শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে, যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।

৮. শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।

 

কিন্তু লাল চিনি পরিশোধন করতে গিয়ে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। চিনি পরিশোধন করতে ব্যবহার করা হয় সালফার এবং হাড়ের গুঁড়ো।

 

সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে সম্পর্কে মার্কিন গবেষক ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণাপত্রে বলেন -

 

চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সঙ্গে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।

 

ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে প্রমাণ করে, রিফাইন করা চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। হার্ট ও কিডনি ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।

 

অনেকগুলো অপকারী বা বিধ্বংসী দিক থাকার কারণেই ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন সাদা চিনিকে ‘বিষ’ বলেছেন। তাই সাদা চিনি বাদ দিয়ে তিনি লাল চিনি খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।