ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৫৪

কোমল পানীয় ডেকে আনে আগাম মৃত্যু: গবেষণা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩০ ১৩ মার্চ ২০২১  

চিনি দিয়ে বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি পানীয় আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ, এসব খাবারের ফলে হৃদরোগ এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। নতুন একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। হার্ভাড ইউনিভার্সিটির টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালিত ওই গবেষণাটি গত মাসে প্রকাশিত হয়।


গত ৩০ বছর ধরে সারাবিশ্বের ৩৭ হাজার পুরুষ এবং ৮০ হাজার নারীর ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। যেখানে দেখা গেছে, চিনি দিয়ে তৈরি হয়েছে এমন পানীয় খাওয়ার ফলে অন্য কোনও কারণ ছাড়াই তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে গেছে।


গবেষণা বলছে, এ জাতীয় পানীয় যত বেশি খাওয়া হবে, তাদের মৃত্যুঝুঁকিও ততই বেড়ে যাবে। গবেষক ও প্রধান লেখক ভাসান্তি মালিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'যারা মাসে একবার এরকম চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করে। তাদের তুলনায় যারা চারবার পর্যন্ত পান করে। ওদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি ১ শতাংশ বেড়ে গেছে।


যারা সপ্তাহতে দুই থেকে ছয়বার পান করে, তাদের বেড়েছে ৬ শতাংশ। আর যারা প্রতিদিন এক থেকে দুইবার চিনির পানীয় খায়, তাদের বেড়েছে ১৪ শতাংশ। যারা প্রতিদিন দুইবারের বেশি এরকম চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করে। ওদের আগাম মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়েছে ২১ শতাংশ।


বিশ্বব্যাপী কোমল পানীয় খাওয়ার হার
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় খেয়েছেন, তাদের আগাম হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক এ কারণে যে, সারাবিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের প্রবণতা বাড়ছে।


বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর বলছেন, বিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের হার বছরে গড়ে জনপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.৯ লিটারে, যা পাঁচ বছর আগেও ছিল গড়ে ৮৪.১ লিটার।


হার্ভাডের গবেষকরা বলছেন, ডায়েট কোমল পানীয় খাওয়া কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোমল পানীয়ের বাজারে তাদের অংশ খুবই কম। এরকম পানীয় পানের হার বছরে জনপ্রতি মাত্র ৩.১ লিটার।


দেখা গেছে, বিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে চীন। বছরে দেশটির একজন নাগরিক এ জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে ৪১০.৭ লিটার।

 

এরপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (৩৫৬.৮ লিটার), স্পেন (২৬৭.৫ লিটার), সৌদি আরব (২৫৮.৪ লিটার), আর্জেন্টিনা (২৫০.৪ লিটার)। এই পরিসংখ্যান হিসাবে চীনে একজন বাসিন্দার গড় কোমল পানীয় পানের হার প্রতিদিন এক লিটারেরও বেশি।


ক্যালোরির হিসাব নিকাশ
চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে ২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, একজন আমেরিকান প্রতিদিন চিনিযুক্ত পানীয় থেকে ১৫৭ ক্যালোরি গ্রহণ করে। যেটি এক ক্যান কোমল পানীয়ের চেয়ে একটু বেশি।


যেমন কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩৩০ মিলিলিটারের এক ক্যান কোকাকোলায় ৩৫ গ্রাম চিনি রয়েছে, যা সাত চা চামচ চিনির সমান।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হলো, প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু যখন ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, তখন কোমল পানীয় খাওয়ার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না।


চীনের একজন নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ১৮৮ ক্যালোরি গ্রহণ করছেন। যদিও এ হিসাব ছিল দেশটিতে চিনির ওপর শুল্ক বাড়ানোর আগে। শুল্ক বাড়ার পর মাসে চিনির তৈরি পানীয় খাওয়ার হার কিছুটা কমেছে।


বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে চিনি দিয়ে তৈরি পানীয়ের ওপর নানা ধরনের কর রয়েছে। এ কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ গবেষণা এটাই প্রমাণ করছে, আরো অনেক দেশের এরকম কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।


হার্ভাডের পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলছেন, এ গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, শিশু ও তরুণদের কাছে চিনিযুক্ত পানীয়ের প্রচার সীমিত করা উচিত। সেই সঙ্গে সোডা জাতীয় পণ্যের ওপর কর বসানো উচিত।


কারণ এ জাতীয় চিনির পানীয় খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে যেসব রোগের শিকার হতে চিকিৎসা ব্যয় হয়, বর্তমান কোমল পানীয়ের মূল্য থেকে সেই খরচ আসছে না।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি বড় উদ্বেগ হলো, এ জাতীয় চিনিযুক্ত কোমল পানীয় প্রভাব শিশু এবং তরুণদের ওপর যেসব প্রভাব ফেলছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে স্থূলতার হার ১৯৭৫ সালেও ছিল ১১ মিলিয়ন, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ মিলিয়ন। তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত কোমল পানীয় খেলে তার প্রভাব হতে পারে আরো ভয়াবহ।