ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬৫৩০

খাঁটি ঘি চেনার ৫ উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪১ ২৩ ডিসেম্বর ২০২০  

অতীতে ভোজনপ্রিয় বাঙালির রসনার অন্যতম উপাদান ছিল ঘি। গরম ভাতের সঙ্গে ঘি-কাঁচামরিচ খাওয়ার চল ছিল। কিন্তু খাঁটি ঘিয়ের অভাবে বহু দিন হলো অনেকে সেই অভ্যাস ছেড়েছেন। প্রবীণ মানুষেরা জানালেন, তাদের ছোটবেলায় গাওয়া ঘিয়ের স্বাদই ছিল আলাদা। দীর্ঘক্ষণ মুখে স্বাদ লেগে থাকতো। ঘি দিয়েই এক থালা ভাত খাওয়া হয়ে যেতো। 

 

ইদানীং যেসব বোতলবন্দি ঘি পাওয়া যায়, তাতে সেই স্বাদ নেই। নামীদামি সংস্থার ঘিও খেয়ে সুখ হচ্ছে না। কিন্তু এখন বেশি লাভের জন্য কারবারিরা ঘিয়ের সঙ্গে ডালডা, রিফাইন তেল, বাটার অয়েল মিশিয়ে দিচ্ছে। তা ছাড়া খাঁটি দুধও পাওয়া সমস্যার। ভেজাল দুধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ঘি। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, বাড়িতে রাখা ঘিয়ের শিশি ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, জারের নীচে এর আস্তরণ। আর উপরে তৈলাক্ত আবরণ। খাঁটি ঘিয়ে এমনটা হয় না। পুরোটাই তরল থাকার কথা।

 

প্রথম পদ্ধতি
ভেজাল হয়েছে কিনা তা জানতে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি গরম করুন। যদি সঙ্গে সঙ্গে গলে যায় এবং গাঢ় বাদামী হয়,  তাহলে এটি খাঁটি। আর যদি গলে যেতে সময় নেয় এবং হালকা হলুদ হয়, তাহলে এটি ভেজাল। ঘি খাঁটি হলে তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গলে যাবে। আর যদি ঘিয়ের মধ্যে ভেজাল মেশানো থাকে, তাহলে তা গলতে অনেক সময় নেবে। একাধিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘি, সঠিক পদ্ধতি মেনে নিয়মিত খেতে পারলে ওজন বাড়বে না বরং কমবে। এছাড়া ঘির একাধিক উপকারিতাও রয়েছে।

 

দ্বিতীয় পদ্ধতি
ভেজাল কিনা তা জানতে নারকেল তেলও ব্যবহার করা যায়। একটি পাত্রে কিছু ঘি ও নারকেল তেল এক পাত্রে মিশ্রিত করুন। জারটি ফ্রিজে রাখুন। যদি ঘি ও নারকেল তেল পৃথক স্তরে স্থির হয়ে যায়, তবে ঘি ভেজাল। মস্তিষ্কের সচলতা বজায় রাখতে প্রয়োজন উপকারী ফ্যাটের। ঘিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাট যা মস্তিষ্কের কোষের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ঘিতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

 

তৃতীয় পদ্ধতি
টেস্ট টিউবে এক টেবিল চামচ ঘি গরম করে নিন। এরপর ওর মধ্যে সামান্য চিনি ও সমপরিমাণ ঘন এইচসিআই যোগ করুন। সব মিশ্রিত করতে ভালোভাবে নাড়ুন। যদি নীচের স্তরে গোলাপী বা লাল রঙ দেখা যায়, তাহলে ঘি খাঁটি নয়। তাতে ভেজাল মেশানো হয়েছে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও ঘি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। খালি পেটে ঘি খেতে পারলে শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

 

চতুর্থ পদ্ধতি
ঘি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ রাগড়ান। এরপর শুঁকে দেখুন যে গন্ধ আছে কিনা। যদি কিছুক্ষণ পরে ঘি থেকে গন্ধ আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন ঘিয়ের মধ্যে ভেজাল আছে। কারণ খাঁটি ঘিয়ের গন্ধ এত দ্রুত বিলীন হয়ে যায় না। মাখন ও চিজে যেমন ট্রান্স ফ্যাট থাকে, ঘিয়ে তা নেই। এছাড়া ঘি বহুদিন ভালো থাকে। কারণ খাঁটি ঘিয়ের আর্দ্রতা কম। বলা হয় ঘি যত পুরনো হয়, তত তার স্বাদ খোলে। এমনকি গুণও বাড়ে। প্রতিদিন গরম ভাতে এক চামচ ঘি খেলে শরীর ভালো থাকে। যে কারণে আগেকার দিনে গরম ভাতে পাতে ঘি, লেবু, লবণ, মরিচ আগে দেয়া হত।

 

পঞ্চম পদ্ধতি
হাতের তালুতে এক চামচ ঘি নিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। সাধারণত ঘি শরীরের তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে। এখন যদি দেখেন যে হাতের তালুতে নেয়া ঘি আপনাআপনিই গলতে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন সেটা খাঁটি ঘি। ঘিয়ের মধ্যে ভেজাল মেশানো হলে তা সহজে গলবে না। ঘি গরম করার পর ঠাণ্ডা করলে একই লেয়ার জমে। তাই সামান্য একটু ঘি কাচের জারে সামান্য গরম করে, ঠাণ্ডা করুন এবং ফ্রিজ এ রেখে দিন। এতে যদি একটি লেয়ার থাকে তাহলে খাঁটি ঘি। আর যদি দুটো লেয়ার হয়, পাত্রের নিচের দিকে সাদা জমাট বেঁধে থাকে এবং উপর দিকে তেল উঠে থাকে, তাহলে ঘিতে ভেজাল আছে। সাধারণত নারকেল তেলের মিশ্রণ থাকলে এরকম হয়ে থাকে।