ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০০৭

মুজিববর্ষে নানা আয়োজন

গর্বের অগ্নিঝরা মার্চ শুরু

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:০১ ১ মার্চ ২০২০  

শুরু হলো আবারও সেই গর্ব করা অগ্নিঝরা মার্চ। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। বাঙালিরা প্রত্যাশা করে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় আড়াই মাস পর ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় বাঙালি বুঝতে পারে, এ অঞ্চলের মানুষকে কখনোই শাসনভার নিতে দেবে না পাকিস্তানি শোষকের দল। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তারা।

 

পহেলা মার্চেই ঢাকার মতিঝিল এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে সমবেত হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ। স্লোগান ওঠে - 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।'

বঙ্গবন্ধু এক মুহূর্ত দেরি না করে এ বৈঠক থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ২ ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী টানা হরতালের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

 

৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মঞ্চে উঠে দৃপ্তকণ্ঠে  যার যা আছে, তাই নিয়ে চূড়ান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানানোর সেই মুহূর্তকে অনন্য ছন্দময় বর্ণনায় তুলে ধরেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ - "শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে / অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। / তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, / হৃদয়ে লাগিল দোলা- / জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার, সকল দুয়ার খোলা- / কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? / গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি : / 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, / এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' / সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।"

 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার পর পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা বুঝে যায়, আর দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয় বাঙালিকে। তাই ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝঁপিয়ে পড়ে বর্বর ও হিংস্র পাকিস্তানি সেনারা। শুধু ঢাকাতেই হত্যা করে এক লাখের বেশি মানুষকে। গ্রেফতার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

 

নয় মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

 

অগ্নিঝরা মার্চকে স্মরণ করতে মাসজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এবছর বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে মাসটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী  এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি ও নানা আয়োজন থাকছে এবারের স্বাধীনতার মাস মার্চ। 

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর