ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১
good-food
১০৫৪

গর্ভনিরোধক মিনিপিল: ঝুঁকি কতটুকু?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:০১ ২৪ মার্চ ২০২৩  

 গর্ভনিরোধের জন্য কেবল প্রোজেস্টোজেন থাকা মিনিপিল সেবনে স্তন ক্যান্সারের কিছু ঝুঁকি দেখছেন গবেষকরা। 

 

বিবিসি জানিয়েছে, পিএলওএস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রথমবারের মত এ ধরনের পিল সেবনে স্বাস্থ্যঝুঁকির এই দিকটি খতিয়ে দেখা হয়েছে। 

 

এ ধরনের ঝুঁকি সামান্য পরিমাণে দেখা গেছে মূলত বয়স্কদের মধ্যে, যা ওষুধ সেবন বন্ধ করার কয়েক বছরের মধ্যে দূর হয়ে যায়। 

 

তবে উল্টো দিকে কেবল প্রোজেস্টোজেন থাকা এই পিল আবার কয়েক ধরনের ক্যান্সার থেকে নারীকে দূরে রাখে।

 

হরমোনাল গর্ভনিরোধক সেবনকারী নারীর জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম। এতে করে নারী কয়েক দশক সুরক্ষিত থাকতে পারেন বলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এই পিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষকে ভালো ও মন্দ দুটো দিকই দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে।


মিনি পিল কী? 

 

গর্ভনিরোধক বড়ির মত নিয়মিত সেবন করা হলেও মিনিপিল কখনও কখনও ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতেও দেওয়া হয়। 

 

মিনিপিলে শুধুমাত্র প্রোজেস্টোজেন হরমোন থাকে। প্রোজেস্টেরন হরমোনের কৃত্রিম সংস্করণ হল এই প্রোজেস্টোজেন। গর্ভনিরোধের নিয়মিত বড়িতে ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনও থাকে। 

 

যারা শিশুকে বুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন অথবা যাদের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি রয়েছে তাদের ওয়েস্ট্রোজেন হরমোন এড়িয়ে চলতে হয়। এক্ষেত্রে একটি ভালো বিকল্প হলো প্রোজেস্টোজেন। 

 

কোনো রকম বিরতি না রেখে প্রতিদিন খেলে মিনিপিল অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রোধে ৯৯ শতাংশ কার্যকর। 


এ ধরনের বড়ি ওষুধের দোকান থেকে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াও কেনা যায় বলে জানাচ্ছে বিবিসি। 

 

তবে মিনিপিল যৌনবাহিত সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় না। 

 

স্তন ক্যান্সার হলে কী ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়?

 

বুকের উপরের দিকে অথবা বগলে দানা হতে পারে, যা সহজে দেখা যায় না।

স্তনের আকার বদলে যেতে পারে।

ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

স্তনের রঙ পরিবর্তিত হতে পারে – অনেক ক্ষেত্রেই লালচে রঙ ধারণ করে।

স্তনের বোঁটায় র‌্যাশ হতে পারে।

স্তন বোঁটা থেকে কষ বা পুঁজ বের হতে পারে। 

 

কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে?

 

গবেষকরা ৩০ হাজার রোগীর তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। যারা লাগাতার পাঁচ বছর ধরে মিনিপিল সেবন করছেন, তাদের পরের ১৫ বছরে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। 

 

তবে কোন বয়সে পিল শুরু করা হয়েছে তাও নির্ভর করছে এই হিসেবে। 

 

দেখা গেছে, প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে আট জন স্তন ক্যান্সার ঝুঁকিতে রয়েছেন, যদি তারা কিশোর বেলার পেরুতেই পিল খেতে শুরু করে থাকেন। 

 

আবার প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ২৬৫ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, যদি তারা তিরিশের পরে পিল সেবনে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন।


তবে মিনিপিল সেবনের অভ্যাস এখনই বন্ধ করার কথা বলছেন না গবেষকরা। 

 

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জিলিয়ান রিভস বলেন, “আমি এমন কোনো পূর্বাভাস দেখছি না যাতে করে বলা যেতে পারে যে নারীরা এখন যেভাবে পিল নিচ্ছে, সেই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। 

 

“এই গবেষণার মূল কারণ ছিল আমাদের জানার ঘাটতিটুকু পূরণ করা।” 

 

লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের মাইকেল জোনস বলেন, “এই গবেষণা বলছে, হরমোন থাকা গর্ভনিরোধক সেবন মেনোপজের আগে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়িয়ে তোলে।

 

“এই ঝুঁকি বিভিন্ন ধরনের হরমোননির্ভর গর্ভনিরোধের ক্ষেত্রে একই রকম। প্রোজেস্টোজেন থাকা গর্ভনিরোধকের বেলাতেও তাই, যদিও ঝুঁকির মাত্রা নিয়ে এখনও কমই জানা গেছে।”

 

কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের ক্যান্সার প্রতিরোধ, শনাক্ত ও পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান স্টেফেন ডাফি বলেন, “গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ১০ বছর পর বাড়তি কোনো ঝুঁকি থাকে না।”


দাতব্য সংস্থা ব্রেস্ট ক্যান্সার নাওয়ের কোট্রিনা টেমসিনাইটে বলেন, “যদি স্তন ক্যান্সার ও গর্ভনিরোধক নিয়ে দুঃশ্চিন্তা থাকে, অথবা কী ধরনের বড়ি সেবন করছেন তা জানা না থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কিংবা পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে কথা বলতে হবে।”

 

ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলছে, স্তন ক্যান্সার হতে পারে এমন আরও কিছু বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তবে এসব ঝুঁকি থেকে সাবধান থাকার উপায়ও রয়েছে।

 

প্রতি ১০০ জন স্তন ক্যান্সার রোগীর বেলায় দেখা গেছে, অন্তত আট জনের বেলায় এর কারণ স্থূলতা। অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থেকে একই অনুপাতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

বয়স হয়ে যাওয়া অবশ্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। এছাড়া জিনগত বা পরিবারে আগে কারো স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকলে এসবও ঝুঁকিতে রাখতে পারে কাউকে।

 

শুধু নারী নয়, পুরুষও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির বাইরে নয়।


ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে সংস্থার জ্যেষ্ঠ হেলথ ইনফরমেশন ম্যানেজার ক্লেইরে নাইট বলেন, “যারা ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজছেন এবং ধূমপান করছেন না, পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন, অ্যালকোহল পরিমিত পান করছেন এবং স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখছেন, তারা এসব থেকে ভালো ফলই পাবেন।

 

“গর্ভনিরোধকের অন্য অনেক উপকারিতাও রয়েছে। আবার ক্যান্সার ছাড়াও অন্য ঝুঁকিও রয়েছে। এ কারণে গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন করা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বড়ি সেবনের আগে তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। তাতে করে নিজের জন্য যা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।”