ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১
good-food
৬৩৮

চলে গেলেন লাবণ্যআপা, পৃথিবী আজ লাবণ্যহীন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫৬ ২৬ অক্টোবর ২০২৩  

‘কামরুন তোকে দেখে এতো ভালো লাগছে বলে’ আমার পাশের চেয়ারে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো লাবণ্য আপা। রাতে ইনবক্সেও লিখেছিলো একই কথা। অথচ লাবণ্য আপাকে দেখে সেদিন আমার বুকটা যে কি পরিমান ভরে গিয়েছিলো আর কি প্রশান্ত হয়েছিলো তা কেমন করে ভাষায় আনবো। সেদিন ছিলো তার ব্লাড ক্যান্সারের দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পর প্রথম দেখা । খুব ভয়ে ছিলাম কেমো দেয়া চুল পড়ে যাওয়া লাবণ্য আপাকে দেখতে কেমন লাগবে। তার সে যে লাবণ্যময়ী মুখ অন্তরে গাঁথা তা এখন কেমন লাগবে! কিন্তু না, এই আমার পোস্ট করা প্রথম ছবিটা সেদিনের। আমার পাশে এসে বসে যখন জড়িয়ে ধরলো আর আমি তাকালাম তখন সে মুখ- 'একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ' সেই লাবণ্য আপা।

 

নামের এত সার্থক রুপ কি খুব বেশি দেখেছি ! প্রথম যেদিন দেখি সেদিন রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতার ‘ লাবণ্যের কথা মনে হয়েছিলো তারপর মনে হয়েছিলো। লাবণ্য আপা যেন তার চাইতেও বেশি কিছু । কালো পল্লবের ঘন গভীর কালো চোখের যে গভীর ভাষা আর মায়া তা যেন আরো একটু বেশি দাবী করে। তিনি যে এক সিগ্ধ শীতল হাওয়া, টুপটুপ ঝরে পড়া বৃষ্টি, শান্ত সিগ্ধ এক জলাশয়। তারপর দুজন যখন জনসংযোগ সমিতির নির্বাহী কমিটিতে একসাথে কাজ করি কথা বলি তখন তার অনিন্দ্য সুন্দর ব্যবহার, আচরণ , সুরুচি, সৌন্দর্যবোধ, সন্মানবোধ মানুষটি আরো আরো অপরুপ করে তোলে। যতবার দেখি ততবার ভাবি- আল্লাহ তুমি এক অপূর্ব কারিগর।

 

সেই লাবণ্য আপা যখন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হলো তখন বুক বিদীর্ণ হয়ে গেলো কষ্টে । সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু প্রার্থনা করেছি দেহে-মনে অপরুপ এই মানুষটি যেন বেঁচে থাকে। সেই মানুষটি যখন সাহসে বলীয়ান হয়ে ফিরে এসেছিলো তখন মনে হয়েছিলো সত্যি পৃথিবী খুব সুন্দর। বলেছিলাম- পৃথিবী এমন সুন্দর থাক লাবণ্য আপা, ঠিক তোমার মতো।

 

খুব জীবনবাদী আর লড়াকু ছিলেন তিনি। আবারও যখন ঘনঘোর অন্ধকার ঘনালো আবারও চিকিৎসার জন্য ভারত। বোনমেরু ট্রান্সফার করা হবে। জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণ। ভেবেছিরাম কি হবে? ফিরে অঅসতে কি পারেবেন। ফিরে আসলে কেমন দেখা যাবে এই ভগ্ন মানুষটিকে। কিন্তু তিনি আবার ফিরে এলেন। আবারও সেই লাবণ্যময়ী। সেই হাসিখুমি মানুষটি। একসাথে পিকনিক আর নানা অনুষ্ঠানে দেখা হলো। আমার কন্ঠে তখন সংশয় আর বেদনা। ‘আপা সব ঠিক আছে তো?’ তিনি কিন্তু তখন সাহসী, আত্মবিশ্বাসী তার দৃঢ় কন্ঠ- ‘ চেষ্টা চলছে রে। দোয়া করিস।’ তারপর বললেন- তুই একদিন আয় খুব জমিয়ে আড্ডা দেই। না আর জমিয়ে আড্ডা হলো না লাবণ্য আপা।

 

সব সুন্দরের বোধহয় গভীর বেদনা থাকে। যা হয়তো সুন্দরকে আরো গভীরতা দেয়। লাবণ্য আপার বেদনার উৎসমুখ কিছুটা হলেও জানতাম। জানতাম তার জীবনবোধ আর দর্শন। কত সুন্দর করে বেদনা লুকিয়ে ‍ঝিনুকের মুক্তো হওয়া যায় তা তিনি জানতেন। দুর্লভ মুক্তাকে আসল জহুরী ছাড়া চিনতেও পারে না। নিগুঢ়তম বেদনা নিয়েও তিনি ছিলেন সুন্দরতম শিল্প, বিধাতার আশ্চর্য শিল্পকর্ম ।

 

লড়াই করে, জীবনের দিকে জানালা খুলে রেখে আজ এই জনসংযোগবিদ (জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পরিচালক-২ ( জনসংযোগ) এবং বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির অকৃত্রিম শুভখকাঙক্ষী) বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি চলে গেছেন। সামিল হয়েছেন চিরজীবিতদের দলে। পৃথিবী আজ লাবণ্যহীন, ধুসর। পৃথিবী আজ থমকে গেছে, তার রুপ-রস -গন্ধ আজ বিবর্ণ। আকাশ আজ ছাইরং, সমূদ্র আজ শুষ্ক লবণ।

 

আমার প্রিয় লাবণ্য আপা, তুমি যেখানে গেছে সেখানে আজ অসংখ্য ফুল ফুটেছে। রংয়ে রংয়ে রঙিন হয়ে গেছে সে জগৎ। তোমাকে বরণ করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে।সেখানের আকাশে লক্ষকোটি তারা।তোমার জন্য দোয়া- জান্নাতের সর্ব্বোচ স্থান হোক তোমার স্থান।

 

লেখক: নূর কামরুণ নাহার

ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পিআর, ডিপিডিসি

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর