ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২০৬

জলবায়ু চ্যালেঞ্জের ওপর নিউজউইকে তথ্যমন্ত্রীর নিবন্ধ প্রকাশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:৫১ ৪ নভেম্বর ২০২২  

জলবায়ুু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ জলবায়ুু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যকর এবং উদ্ভাবনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের ওপর আলোকপাত করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রচিত একটি নিবন্ধ গতকাল ৩ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ ‘নিউজউইক’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ‘এ ফোকাস অন ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধটি নিচে দেয়া হলো। 
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নে এর অবদান নগণ্য। এটি সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১ শতাংশের অর্ধেকেরও কম নির্গমন করে।

 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বছরে ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার হারে বাড়ছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বৈশ্বিক আচরণের কোন পরিবর্তন ছাড়াই, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বাংলাদেশকে ২০৫০ সালের মধ্যে এর মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশের সমান বার্ষিক অর্থনৈতিক ব্যয় করতে হবে, যা ২১০০ সালের মধ্যে বেড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন হতদরিদ্র বাংলাদেশিরা।

 

সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, গড়ে বিশ্বের তাপমাত্রার এক ডিগ্রি বৃদ্ধি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় এক মিটার বাড়িয়ে  দেবে, যা বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করবে। এটি ঘটলে, বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে। বিশ্বব্যাংকের আশংকা, উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ‘জলবায়ু অভিবাসী’র অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে বাংলাদেশের।

 

তবে, বাংলাদেশ সরকার দেশটির জলবায়ুু সহনশীলতার ক্রমাগত উন্নতি করছে। এটি দেশটির সংবিধানে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা যুক্ত করেছে। সেই লক্ষ্যে, এটি শিগগিরই ২০ বছরের মুজিব জলবায়ুু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০সহ একটি ধারাবাহিক জলবায়ুু প্রশমন কর্মসূচি গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ জলবায়ুু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনা, যা ইতোমধ্যেই চলছে, অভিযোজন এবং প্রশমনের ওপর দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। একটি হালনাগাদ পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক-সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নগর উন্নয়ন যোগ করা হবে।

 

এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় এর মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন আট গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি এটি মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গত দশকের বেশির ভাগ সময় এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিকেও পেছনে ফেলে রেখেছে। ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি  রেকর্ড ৫২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এইচএসবিসি ব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে, কারণ, গত ২০ বছর ধরে তার গড় বার্ষিক জিডিপি ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সরকারকে জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবিলার উপায় সরবরাহ করেছে। এক দশকেরও  বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জলবায়ুু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড ৮শ’টি গবেষণা, প্রশমন এবং অভিযোজন প্রকল্পে ৪৮০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। গত সাত বছরে, সরকারের জলবায়ুু সংক্রান্ত ব্যয় ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দ্বিগুণ হয়ে চলতি ২০২২ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

 

বাংলাদেশ কম কার্বন অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প চলছে যা ৯১১ দশমিক ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং কম্বাইন্ড-সাইকেল গ্যাস-ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট যা ৩,২০৮  মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। বাংলাদেশ ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং ৪ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি পরিবেশ বান্ধব চুলা স্থাপন করতে সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশি বিনিয়োগে ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করেছেন।

 

ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশী দ্বীপবাসীরা ঝিনুক রোপণ করছে এবং ঝিনুক-ঘেরা প্রাচীরগুলোর যতœ করছে। এটি তীরে পৌঁছানোর আগে সমুদ্রের তরঙ্গ শান্ত করে উপকূলীয় ক্ষয় হ্রাস করে। অক্সিজেন তৈরি বাড়ানোর জন্য এবং তীব্র আবহাওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি রোধ করার জন্য, গরান গাছ প্রচুর পরিমাণে রোপণ করা হয়েছে। গরান গাছের শিকড়, কান্ড এবং পাতা পানির প্রবাহকে বাধা দেয়। পানি প্রবাহের গতি ২৯ শতাংশ থেকে ৯২ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

 

পুনর্বনায়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি চালু করেছে। যা মানুষকে গাছ লাগাতে এবং তা বাড়াতে উৎসাহিত করে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ তার বনভূমির আয়তন তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে, যা ২০০৫ সালের ৭ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ২২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

 

বাংলাদেশ বন্যা প্রতিরোধে ফসলের বৈচিত্র্য এবং সহনশীলতা বাড়াতে বিজ্ঞানীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। ধানের খড় এবং জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি ভাসমান বেড বন্যার পানি সহ্য করে স্কোয়াশ, ওকরা এবং লাউ উৎপাদন করতে সক্ষম জৈব দ্বীপ তৈরি করে। লবণ-সহনশীল বীজ বাংলাদেশি কৃষকদের লবণাক্ত মাটিতে আলু, গাজর, গ্রাউন্ড, লাল বিট, বাঁধাকপি এবং ভারতীয় পালংশাক রোপণ করতে সহায়ক হচ্ছে।

 

এ ছাড়া বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দেশটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রথম পারমাণবিক শক্তি চুল্লি নির্মাণ শুরু করে। ইউনিটটি আগামী বছর চালু হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় চুল্লি নির্মাণ জুলাই ২০১৮ সালে শুরু হয়।

 

অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের উদ্যোগ লক্ষ্য করেছে। নয়া দিল্লি-ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর আদিত্য পিল্লাই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ গত পনের বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে ক্রমবর্ধমানভাবে উন্নত করেছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ একটি মডেল তৈরি করেছে যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এর থেকে শিক্ষা নিতে পারে।’

 

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে রেহাই দেয়নি, কিন্তু সরকার এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাবে পিছিয়ে যাওয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।