ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭০০

সাবধান !

ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিনে ক্যান্সার উপকরণ

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:২০ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ :

আলসার, হাইপারঅ্যাসিডিটি (মাত্রাধিক অ্যাসিড প্রস্তুত ও নি:সারণ), গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স (উর্ধ্বগামী অম্লীয় ঢেকুর), পেটে জ্বালা-পোড়ার জন্য আর র‍্যানিটিডিন ওষুধ গ্রহণ না করার জন্য সবাইকে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল।

কারণ গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইনের জেন্টাকে (জেনেরিক:র‍্যানিটিডিন) "নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিন" নামের একটি কারসিনোজেনিক( যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে) রাসায়নিক যৌগ পাওয়া গিয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে র‍্যানিটিডিনের কাঁচামাল আমদানিসহ র‍্যানিটিডিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


অতি সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে ডায়াবেটিসের বহুল ব্যবহৃত ওষুধ মেটফরমিনের কয়েকটি প্রোডাক্টে নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিন পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।  ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরের হেলথ সার্ভিস অথরিটি ৪৬ টি মেটফরমিন প্রোডাক্ট থেকে ৩ টি বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। বাকিগুলোর ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।

ইউরোপে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে মেটফরমিনের সব প্রোডাক্টে নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিনের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছে এবং মেটফরমিনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা রোগীদের এখনো মেটফরমিন গ্রহণ করতে নিষেধ করেননি। কারণ মেটফরমিন ছাড়া অনেক রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।

তবে মেটফরমিনে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিন থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অতি সহসাই পরীক্ষার মাধ্যমে মেটফরমিনের প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। তাই সবাইকে চোখ কান খোলা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

মেটফরমিনে এই কার্সিনোজেনটি পাওয়া গেলে এবং ফলশ্রুতিতে বাজার থেকে ওষুধটি তুলে নিতে হলে বিশ্বজুড়ে এক অকল্পনীয় বিপর্যয়ের সুত্রপাত হবে বলে মনে করছি।


গবেষণার জন্য ব্যবহৃত ইঁদুরে লিভার ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিন ব্যবহার করা হয়।


কিন্তু এই কারসিনোজেনটি মানব দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে বলে প্রমাণিত হয়নি। যেহেতু ইদুরে যৌগটি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, তাই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে মানব দেহেও যৌগটি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম।

এই যৌগটির দৈনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা হলো ৯৬ ন্যানো গ্রাম। গ্রহণযোগ্য মাত্রার বেশি নাইট্রোসোডাইমিথাইল অ্যামিন শরীরে গেলে লিভার, ফুসফুস, কিডনিসহ জিহ্বা বা মুখে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। কিছু কিছু খাবারে কিন্তু এই কারসিনোজেনটি স্বল্প মাত্রায় উপস্থিত থাকে।

প্রিজারভেটিভে সংরক্ষিত মাংস, মাছ, স্মোকড বা পোড়া মাংস, ক্লোরিন বা ক্লোরামিন দিয়ে বিশুদ্ধকৃত পানিতেও এই যোগটি থাকতে পারে। পানিতে এই যৌগের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হল ৭ ন্যানোগ্রাম/লিটার। এ ছাড়াও তামাকের ধোঁয়া, চিবিয়ে খাবার তামাক, লবনে জারিত শুকরের মাংস, পনির, বিয়ার, হুইস্কি, ডিটার্জেন্ট বা পরিষ্কারক, শ্যাম্পুসহ অন্যান্য প্রসাধনীতেও এই ভয়ংকর বস্তুটি থাকতে পারে।