ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭১১

ঢাকার বাইরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

ডেঙ্গুতে আরো ১১ জনের মৃত্যু

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪৭ ১১ আগস্ট ২০১৯  

ডেঙ্গুতে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চল্লিশে। যদিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে এ সংখ্যা অনেক বেশি। 
এদিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁ, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহে মারা গেছে আরো তিনজন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩শ ৩৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত তিনদিনে ঢাকায় নতুন রোগী ভর্তি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে, আর ঢাকার বাইরে বেড়েছে ১০ শতাংশ। তাই ঢাকা ছাড়ার আগে সতর্ক থাকতে বললেন চিকিৎসকরা।

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কমলেও বেড়েছে ঢাকার বাইরে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়টায় সতর্ক থাকতে। বিশেষ করে এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর হওয়া রোগীদের ঢাকা না ছাড়ার পরামর্শ তাদের।

ঈদের ছুটিতেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে রোগীর চাপ খানিকটা কমেছে হাসপাতালগুলোতে। 
মোহাম্মদপুরের জেসমিন বেগম রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আছেন পাঁচ দিন। দুই সন্তান ডেঙ্গু আক্রান্ত। একজনের অবস্থা ভালো হলেও আরেকজন শঙ্কায়।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২০ শয্যার দু'টি ডেঙ্গু ওয়ার্ড উদ্বোধন কোরে ঢাকায় ফেরার পর নগরবাসীকে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

 

এদিকে এবছর মাঝামাঝি পর্যন্ত মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে আরও দুই হাজার ৩৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা আগের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ১৭৬।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার হার গত তিন দিনের তুলনায় বেড়েছে। নতুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ঢাকা মহানগরে কমছে। 
অর্থাৎ রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ঢাকার বাইরে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়লেও সেটা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।
তিনি বলেন, লোকজন ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ায় ঢাকায় রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। আর সারাদেশে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে, তবে তা আশঙ্কাজনক বলা যাবে না। ঢাকার বাইরে যেহেতু ডেঙ্গু মশা কম, সে কারণে আক্রান্তদের কাছ থেকে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা কম। এ কারণে আমরা আশা করছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে।

ঢাকার বাইরে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবগুলো হাসপাতালের চিকিৎসককের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া আছে। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ১১ অগাস্ট সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ১৭৮ হয়েছে। এর মধ্যে অগাস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনেই ২২ হাজার ৭১৭ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।


 
৮ অগাস্ট পর্যন্ত দুদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দৈনিক হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমলেও গত তিন ধরে তা আবার বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৮১ জন, যা আগের দিন এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬৫ জন।

অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বাইরে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন একহাজার ৩৫৩ জন, যা আগের দিন এক হাজার ১১১ জন।

সরকারি হিসেবে, চলতি বছর এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে একহাজার ৮৮৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছায়। আর অগাস্টের প্রথম ১০ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৭১৭ জন।

ডেঙ্গুর বাহক মশা এইডিস এজিপ্টি প্রধানত শহরে পাওয়া গেলেও মানুষের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে যানবাহনে করে তা পৌঁছে যাচ্ছে সারা দেশে। ফলে কোরবানির ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি বিপদজনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের পক্ষ থেকে ঈদযাত্রার যানবাহন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে মশা মরার ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যদিও তা মানা হচ্ছে কিনা তার নজরদারি নেই।   


 
কারও মধ্যে জ্বরসহ ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা গেলে ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও সংবাদমাধ্যমে আসা সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি।

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে এ বছর ডেঙ্গুতে অন্তত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৮ হাজার ৭৫৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৪ হাজার ৬৭১ জন এবং বাইরে ৪ হাজার ৮৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে গেছেন। এসব জেলায় ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৫৭ জন নতুন রোগী।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩৭ জন, খুলনা বিভাগে ২০৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৮৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৪৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০৫ জন, রংপুর বিভাগে ৭৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

এসময়ে ঢাকা মহানগরে একহাজার ৫৬৮ এবং ঢাকার বাইরে একহাজার ৩৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।