ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬৬৮

ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য

ডেঙ্গু টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:২৭ ১৬ আগস্ট ২০১৯  

ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের পরীক্ষা করে ভিন্ন রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে খুলনার সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। 

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, খুমেক হাসপাতালে রোগীদের টেস্ট নিয়ে ভুল রিপোর্ট দিয়েছে সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ নিয়ে রাতে রোগীদের স্বজন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। ভুল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে দু’জনকে থানায় আনা হয়েছে।

রেজাউল হোসেন (৩৬) নামে এক রোগীর বড় ভাই আফজাল হোসেন বলেন, ১৪ আগস্ট খুমেক হাসপাতালে তার ছোট ভাইয়ের প্লাটিলেট টেস্ট করানো হয়। ওই সময় রিপোর্টে প্লাটিলেট আসে ১ লাখ ৪০ হাজার। পরদিন সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই টেস্ট করা হয়। সেখানে আসে মাত্র ১৭ হাজার। পুনরায়ে পরীক্ষা করা হলে আসে ২৮ হাজার।
তার প্রশ্ন - একই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট আসে কীভাবে?
একই অভিযোগ করেন ডেঙ্গু রোগী বাদশা ও তার ভগ্নিপতি রুহুল কুদ্দুস।

খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (আরপি) ডা. শৈলান্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাটিলেট টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ। একজন সুস্থ মানুষের প্লাটিলেট দেড় থেকে ৫ লাখ কাউন্ট করা হয়। কারও প্লাটিলেট ১৭ হাজারে নেমে এলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায থাকেন। এসব রোগীর কোনও রকম আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ শুরু হবে।

অভিযোগ রয়েছে,  খুমেক হাসপাতালে মেডিসিন ইউনিটগুলোয় রোগীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান কিছু অসাধু চিকিৎসক। তারা টেস্টের নামে কমিশন বাণিজ্য করছেন। মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট না করালে তারা রিপোর্ট দেখেন না, ছুড়ে ফেলে দেয়ারও নজির রয়েছে। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসা মেলে।

সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকের সহকারী ম্যানেজার বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফ অশিষ রায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীদের রক্ত নিয়ে আসেন এবং রিপোর্টও পৌঁছে দেন। ডাক্তারদের অনুমতি নিয়ে রোগীদের রক্ত নিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করেন। আমাদের রিপোর্টে কয়েকজন রোগীর প্লাটিলেট ১৬ হাজারের নিচে নেমে আসে। খুমেক হাসপাতালে টেস্ট করলে আসে ১ লাখ ১০ হাজার। রিপোর্টটি আমাদের ভুল কিনা জানতে ডাক্তার সুকুমার সাহাকে ফোন দেই। তখন ওই ডাক্তার আমাকে অন্য আরেক জায়গায় ওই রোগীকে টেস্ট করাতে বলেন।’

তিনি বলেন, তাদের ল্যাব অ্যাসিস্টেটেন্ট অশিস রায় ও তার ভাই দেবাশীষকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট ডা. সুকুমার সাহা তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টগুলো করেন।

এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন,  'এ হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূলে আমি আগে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা সক্রিয় হওয়ায় সুফল এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য রক্ত বাইরে পাঠনোর প্রশ্নই আসে না। ওরা কোনও কৌশলে রক্ত নিয়ে থাকে সেটা দেখতে হবে। এখানে ১২০০ রোগীকে নজরদারি করা সম্ভব না।'
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ডিউটি অফিসার এএসআই বিশ্বজিৎ বলেন, রোগীর স্বজন আফজাল হোসেন সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।