ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর বুধবার, ২০২৪ || ৪ পৌষ ১৪৩১
good-food
১৭

ঢাকা সফরে এসে ১ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:২২ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪  

নানান ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া অতিমাত্রায় রঙচঙ মেখে খবর পরিবেশন করছে। এতে উসকানি রয়েছে, তাতে কারোর চোখ এড়ায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মিক্রম মিশ্রি গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন। প্রত্যাশিত সফরটি নিয়ে অনেকে ধারনা করেছিলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় মিডিয়া যে লাগামছাড়া অপতথ্য প্রচার করছে, এতে নিরুৎসাহিত করা হবে। টেনে ধরা হবে লাগাম।   দুই দেশের টানাপোড়েন কমে আসবে। 

 

বিক্রম মিশ্রি ঢাকায়ে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব। তবে বেশ আলোচনা চলছে ঢাকার সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত একটি গোপন বৈঠক নিয়ে। জানা গেছে, গত ৩ মাস ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যা ঘটেছে তা ৫২ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কেন এমনটি হলো? ভারতকে তো বাংলাদেশের মানুষ বন্ধু-জ্ঞান করে। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর ভারতের সেই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।

 

সামান্য বিষয় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। নানাভাবে উসকানি দেয়া হচ্ছে। একটি সার্বভৌম দেশকে চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করানো হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কথিত অত্যাচারের কথা বলে গর্হিত কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মিশনে হামলা পর্যন্ত করা হয়েছে।

 

ভারতীয় রাজনীতিবিদরা নানান হুঙ্কার দিচ্ছেন। বাংলাদেশের গায়ে কালিমা লাগানোর মতো ঘৃণ্য অপচেষ্টা করছেন। শান্ত এই মাটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, ৩৬ জুলাই খ্যাত ৫ আগস্ট বদলে দিয়েছে এই ব-দ্বীপের শাসন ব্যবস্থা তথা রাজনীতির হিসাবনিকাশ। দিল্লির সমর্থনে বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের উৎখাত হয়েছে ওই দিনে। প্রাণ বাঁচতে  শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধন অকাট্য। সম্পর্কে  কখনো কখনো মেঘ উঁকি দিতেই পরে। যার প্রমাণ দিল দিল্লি। সব আলোচনা-সমালোচনা তথা সম্পর্কের উত্তেজনাকর টানাপড়েনের সময়ে ঢাকায় এলেন দিল্লির বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি ভোরে দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে উড়ে এলেন। দিনের প্রথম ভাগেই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই পররাষ্ট্র সচিব বসলেন বৈঠকে। পরে বসলেন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বাৎসরিক, স্টক টেকিং বা স্ট্রাকচার্ড আলোচনায়। নাম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি।

 

প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা স্থায়ী ওই আলোচনা মধ্যাহ্নভোজের মধ্যদিয়ে  শেষ হয়। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়। এতে গুরুত্ব পেয়েছে ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি। বৈঠকে অবশ্য তাকে ফেরানো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যদিও ঢাকায় এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বৈঠকের ব্যাপারে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরতে পরবর্তী সময়ে দুই পররাষ্ট্র সচিব আলাদা আলাদা ব্রিফ করেছেন 

 

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব অনেকগুলোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। দিল্লির পররাষ্ট্র সচিব কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে মোটেই রাজি হননি। মনে হয়েছে নিজ অবস্থানে তারা অনড়! বৈঠক সূত্রে আগেই খবর বের হয়, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী জিকির নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন দিল্লির প্রতিনিধিরা। ঢাকার প্রতিনিধিরা ব্যাখ্যাসহ জবাব  দেন। খোলাসা করে যেটা বলা হয় তা হলো- দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক ‘বন্ধুত্ব, ‘পারস্পরিক নির্ভরশীলতা’ এবং মাঝেমধ্যে ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’র মিশেলে হয়ে থাকে। এটাই বাস্তব। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কও তার ব্যতিক্রম নয়। 

 

কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়। তাছাড়া এ ঘটনা মানুষের অনুভূতিতে ভীষণভাবে আঘাত করে। বিশেষত অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে যখন বড় করে দেখানো হয় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সরকারি পর্যায়ে এটা নিয়ে যখন কথা বলা হয়। বাংলাদেশ সমস্যা অ্যাড্রেস করে এবং এ নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কূটনৈতিক চ্যানেলে বার্তা দিলেও মানুষের মধ্যে ক্ষোভের এতো সঞ্চার হতো না বলে মনে করে ঢাকা। 

 

আলোচনায় দু’পক্ষের তরফেই বলা হয় বাস্তবতা অস্বীকার করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরং এতে সমস্যা বাড়বে। তাই উভয়ের যৌক্তিক কনসার্ন যত দ্রুত অ্যাড্রেস করা যাবে, ততই মঙ্গল। 

 

সেগুনবাগিচায় কয়েক মিনিটের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের অনুরোধ রেখে গেলেন ভারতীয় সচিব। ব্রিফিং শেষে তীর বেগে বেরিয়ে গেলেন। তখনো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক বাকি। ৪টা ৫ মিনিটে যমুনায় ঢুকলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎটি ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পেল দুই দেশেই। কিন্তু এটা খুব রহস্য যে, সন্ধ্যার আগে সরকারি সব কর্মসূচি শেষ করা দিল্লির বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি পরবর্তী ক’ঘণ্টা কোথায় গেলেন, কার সঙ্গে বৈঠক করলেন। বিশেষ করে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে ৮টা ৩৫ পর্যন্ত এই এক ঘণ্টা কোথায় ছিলেন তিনি। কার সঙ্গে দেখা করলেন তিনি ও তার দুই সফরসঙ্গী। 

 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বিক্রম মিশ্রি একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কাম বৈঠকটি হয় তার। সেই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে জানা ও বুঝার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য মেলেনি। 

 

তবে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, সেনানিবাসস্থ বাসভবনে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের  নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সাক্ষাৎ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত অবহিত হয়েছেন। যেটুকু জানা গেছে সম্পর্কে মেঘ দূর করার বিষয়ে  ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষত দূরে থেকে বিদেশ সচিব বা দিল্লি যা ভাবছিল বাংলাদেশ সফর করে একটি ইতিবাচক ধারনা নিয়েই ফিরেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।