ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭০২

তুমি আমাদের চিরসাথী ফজলে হাসান আবেদ

মুহাম্মদ ইউনূস

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪৪ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯  

আবেদ চলে গেল। কিন্তু তাকে বিদায় জানানো সম্ভব হবে না। সে আমাদের চিরসাথী হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সমাজের কোনো পরত নেই যেখানে আবেদের কর্মকান্ডের বাতাস লাগেনি। বাংলাদেশে সমাজের যে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে,আবেদ তার প্রধান রূপকার। সমাজের যত ভাঙাচোরা,অলিগলি, চোরাবালি, অলীক নিয়মনীতির ফাঁদ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, সবকিছুতে আবেদ তার সৃজনশীল  প্রতিভার ছোঁয়া লাগিয়েছে। এই ছোঁয়া লাগিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়ে তাকে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসাই ছিল আবেদের ব্রত।

এটা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না যে, বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যিনি জীবনে কোনো না কোনোভাবে আবেদের কর্মকান্ডের সুফল ভোগ করেননি। আর তিনি যদি হন বিশাল গ্রামবাংলার দরিদ্রদের একজন, মহিলাদের একজন তাহলে তো তাঁকে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে আবেদের সাক্ষাৎ পেতে হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, আত্মোপলব্ধি, আরও অনেক কিছুতে। আমাদের অজান্তে যে আবেদ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাকে আমরা বিদায় জানাব কীভাবে? আবেদ বাংলাদেশের গরিব মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির অসাধারণ কারিগর। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দৈন্যের মুক্তিদাতা। সে নীরবে তার বিশাল কর্মকান্ড গড়ে তুলেছে। সে মানুষকে ডাক দিয়ে বসে থাকেনি, একাই এগিয়ে গেছে। সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে। সে একাই এগিয়ে গেছে একেবারে পুরো কাজটা সমাধা করার জন্য।

আবেদ সারা বিশ্বে এনজিওর কনসেপ্ট বদলে দিয়েছে। একটি এনজিও দেশব্যাপী প্রায় সব সমস্যার সামগ্রিক সমাধান দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে পারবে এরকম ধারণা ছিল একেবারে অকল্পনীয়। দেশে-বিদেশে অসংখ্য রকম প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচি নিয়ে একটি বিশালায়তনের এনজিওর ধারণা আবেদই দিয়ে গেল। তার চেয়েও তার বড় অবদান একক এনজিও ও বহুমাত্রিক এনজিওর ব্যবস্থাপনাকে একটা নতুন বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে যেতে পারা। এই অবদান তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক গবেষকদের কাছ থেকে বরাবরই একটি প্রশ্ন আসে : বাংলাদেশে যে যা-ই করে সেটা দেশব্যাপী করে ফেলে- আমাদের দেশে এরকম হয় না কেন? আমার বরাবরের জবাব ছিল- তোমাদের দেশে তো এখনো আবেদের জন্ম হয়নি।
আবেদ একটি আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়ে গেছে। তার দুরন্ত সাহস, আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতার কাহিনি আগামী সকল প্রজন্মকে অনবরতভাবে শক্তি জুগিয়ে যাবে। বহু প্রজন্ম পরেও আবেদ তাদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে বেঁচে থাকবে। তুমি যে বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়ে গেছ তার বুনিয়াদের ওপর দ্রুত আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব নেওয়া পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ হলো। আবেদ, তোমার কাছে জাতি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর