ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৮৪

থাইরয়েড রোগে যেসব খাবার কখনই খাবেন না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:২৬ ৬ মে ২০২১  

থাইরয়েড হলো গলার সামনে অবস্থিত প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি। এটি খাবার থেকে আয়োডিন নিয়ে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে। থাইরয়েড হরমোন শরীরের প্রায় সব কার্যক্রমে সহযোগিতা করে। যেমন- হার্ট রেট, লিভার ফাংশন, সার্কুলেশন, মেটাবলিজম ও ইন্টারনাল ক্লক।


কিছু খাবার যেমন থাইরয়েড সুরক্ষায় কাজ করে, তেমনি কিছু খাবার গ্রন্থিটিকে বিপদে ফেলতে পারে। বিশেষ করে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা গ্রন্থিটিতে সমস্যা হলে খাওয়া উচিত নয়। এখানে থাইরয়েড রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে তেমন কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো-


ক্রুসিফেরাস শাকসবজি
নিঃসন্দেহে বাঁধাকপি ও ফুলকপি পুষ্টিকর খাবার। এসব খাবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু নিউ জার্সির এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. রোজেনফেল্ড জানান, ক্রুসিফেরাস পরিবারের সব শাকসবজিতে গয়ট্রোজেনস রয়েছে বলে এগুলো বেশি খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে থাইরয়েড সমস্যা থাকলে। 


গয়ট্রোজেনস থাইরয়েড গ্রন্থির আয়োডিন ব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলে। একসময়ে প্রচুর ক্রুসিফেরাস শাকসবজি খেলে সুস্থ থাইরয়েডও অতি ক্রিয়াশীল বা কম ক্রিয়াশীল হতে পারে। আপনার গোপন থাইরয়েড সমস্যা থাকলে এসব খাবার খেলে সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। ক্রুসিফেরাস শাকসবজিকে রান্না করে খেলে নিরাপদ। কিন্তু অনেকেরই সালাদ হিসেবে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, যা থাইরয়েড সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। 


ভার্জিনিয়ার ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কোচ চেরিল হ্যারিস বলেন, 'আপনার থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন উৎপাদন না করলে ও কাঁচা ক্রুসিফেরাস শাকসবজি খেলে কার্যক্রম ব্যাহত হবে।'


সয়াবিন
গয়ট্রোজেনস সমৃদ্ধ আরেকটি খাবার হলো সয়াবিন। এটা খেলে থাইরয়েড সমস্যার মাত্রা বেড়ে যাবে, যদি শরীর ইতোমধ্যে আয়োডিন ঘাটতিতে ভুগে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট'স থাইরয়েড ডিজিজ স্টেট নেটওয়ার্কের সভাপতি জন উডি সিসট্রাঙ্ক বলেন, 'প্রধান সমস্যা হলো, সয়াবিন থাইরয়েড রোগীদের থাইরয়েড হরমোন শোষণে বাধা দেয়। তাই সমস্যাটি এড়াতে খালি পেটে থাইরয়েড হরমোন সেবন করুন ও খাদ্যতালিকা থেকে সয়াবিন বাদ দিয়ে দিন।'


গ্লুটেনযুক্ত খাবার
অনেক থাইরয়েড রোগীর সেলিয়াক রোগও থাকে। সেলিয়াক রোগ হলো একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার যা গ্লুটেন খেলে প্ররোচিত হয়। একারণে ডা. রোজেনফেল্ড ও ডা. সিসট্রাঙ্ক উভয়েই থাইরয়েড সমস্যা থাকলে গ্লুটেনযুক্ত খাবার না খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেলিয়াক রোগের অনুপস্থিতিতে থাইরয়েড কার্যক্রমের ওপর প্রভাব পড়ে এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।


চিনি
স্বাস্থ্যের ওপর কুপ্রভাব ফেলার কারণে চিনি ইতোমধ্যে যথেষ্ট দুর্নাম কুড়িয়েছে। এখন আরেকটি তথ্য জানলে চিনির প্রতি আপনার আগ্রহ আরো কমে যাবে: থাইরয়েড রোগে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হার্ট-রক্তনালীর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসময় বেশি চিনি খেলে রোগগুলোর ঝুঁকি আকাশচুম্বী হয়। তাই ঝুঁকি কমাতে চিনি সীমিত করুন।


কৃত্রিম সুইটেনার
আপনি হয়তো ভাবছেন যে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম সুইটেনার খাবেন। কিন্তু না, চিনির মতো কৃত্রিম সুইটেনারও থাইরয়েড রোগীর জন্য ভালো নয়। ডা. হ্যারিস বলেন, 'কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম সুইটেনার থাইরয়েড কার্যক্রমে বিঘ্নতা ঘটাচ্ছে।'


সাধারণ লবণ
সমস্যাটা লবণের কোনো উপাদান নিয়ে নয়, সমস্যা হলো লবণে কি নেই তা নিয়ে। আপনি সম্ভবত ইতোমধ্যে জানেন যে থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যক্রমের জন্য আয়োডিনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সাধারণ লবণে এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে না। কিন্তু আয়োডিনের অভাবে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হয় না।


বাজরা ও শিমুল আলু
দিনদিন বাজরা ও শিমুল আলুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাজরার জনপ্রিয়তা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো এতে গ্লুটেন নেই। বাজরার মতো শিমুল আলুও গ্লুটেনমুক্ত। কিন্তু থাইরয়েড রোগীর জন্য দুঃসংবাদ হলো, উভয় খাবারেই গয়ট্রোজেনস রয়েছে। আয়োডিন ঘাটতি অথবা থাইরয়েড সমস্যা থাকলে এসব খাবার না খাওয়াই উত্তম।


প্রক্রিয়াজাত খাবার
বর্তমানে থাইরয়েড রোগ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কালপ্রিট ভাবা হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাবারের অ্যাডিটিভ ও কেমিক্যালকে। ডা. হ্যারিস বলেন, 'গবেষকরা ধারণা করছেন যে অ্যাডিটিভ কারাগ্রিন ও পলিসরবেট ৮০ এর সঙ্গে অনেক অটোইমিউন রোগের যোগসূত্র রয়েছে। এসবের সঙ্গে থাইরয়েড রোগেরও যোগসূত্র থাকতে পারে।' 


তাই থাইরয়েড সমস্যার মাত্রা বাড়াতে না চাইলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এটি থাইরয়েড রোগের সমন্বয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হার্ট-রক্তনালী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।