ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৪০

দেশে ষাটোর্ধ্ব প্রতি ১২ জনে একজন ডিমেনশিয়া রোগী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৫৪ ১৫ জুলাই ২০২১  

দেশে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। রাজধানী ঢাকার চেয়েও উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে এই রোগের প্রকোপ বেশি। আইসিডিডিআরবি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার ‘বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ব্যাপকতা: জাতীয় সমীক্ষার ফলাফল’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। 

 

২০১৯ সালে আইসিডিডিআরবি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স শহুরে ও গ্রামীণ অঞ্চলের ২ হাজার ৭৯৬ জনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে। এই জরিপের মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়া এবং প্রধান অসংক্রামক রোগ বিস্তারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় বয়স্ক ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়ার প্রকোপ, অঞ্চল ভিত্তিক এর ভিন্নতা এবং স্বাস্থ্য সেবার ধরন পর্যালোচনা করা হয়। 

 

ওয়েবিনারে জানানো হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট ডিমেনশিয়া রোগের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮০ হাজার। আর নারী ৮ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ লাখ ৭০ হাজারে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। 

 

ডিমেনশিয়া এমন একটি সিনড্রোম যেক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ কোটি মানুষের ডিমেনশিয়া রয়েছে এবং এর ৬০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করে। 

 

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কে খুব কম তথ্য রয়েছে যা প্রবীণ নাগরিকদের সেবা প্রদানে নীতি নির্ধারকদের একটি বাস্তবমুখী কৌশল তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। অন্যদিকে, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশিরভাগ প্রোগ্রাম প্রজননক্ষম বয়সের মানুষকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। 

 

জরিপে বলা হয়, মহিলাদের মধ্যে সমবয়সী পুরুষদের তুলনায় ডিমেনশিয়ার প্রকোপ ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজশাহী এবং রংপুরে (১৫% এবং ১২ %) ডিমেনশিয়ার প্রকোপ বেশি এবং শহুরে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে (৮ %)-এর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়নি। 

 

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমেনশিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কখনও স্কুলে যাননি এবং যাদের স্ত্রী বা স্বামী নেই সামগ্রিকভাবে ডিমেনশিয়ার প্রকোপ তাদের মধ্যে অন্যদের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্ধেকেরও বেশি হাইপারটেনশন (৫২ %), হতাশা (৫৪ %) এবং ডায়াবেটিস (৮ %) সহ এক বা একাধিক দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা (মাল্টিমর্বিডিটি) ছিল।

 

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পুষ্টির অভাব (৩৫% কম ওজন), স্বল্প শারীরিক ক্রিয়াকলাপ (৪৯ %), উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণ (৫৬ %) এবং উচ্চমাত্রায় তামাক সেবন (৭৬.৬ %) করতে দেখা গেছে। যা সাধারণত নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বা এনসিডি ঝুঁকির কারণ। 

 

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের প্রায় সকলেরই (৯০ %) গত ৬ মাসে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হয়েছে বলে জানা গেছে এবং তারা চিকিৎসার জন্য বেসরকারী হাসপাতালে (১২ %) ও সরকারী হাসপাতালের (৫.৪ %) যোগ্য ডাক্তারদের চেয়ে প্রায়শই কোনও ঔষধ বিক্রেতার কাছে (১৬.৬ %) গিয়েছিলেন। এই স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ধরনটি রোগীদের লিঙ্গভিত্তিক, বসবাসের স্থান (নগর বা গ্রামীণ অঞ্চল) ভিত্তিক কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। 

 

এই গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক এবং গবেষণার কো-পিআই অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ উল্লেখ করেছেন, সমাজের মধ্যে ডিমেনশিয়া সসম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে, তাই খুব বিলম্বে রোগ নির্ণীত হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগী হয়ে আমাদের ডিমেনশিয়া নিয়ে আরও গবেষণা চালানো দরকার, যাতে আমরা ডিমেনশিয়া বৃদ্ধির কারণ শনাক্ত এবং এটির উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি। 

 

অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, বিশেষত বহু রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। তবুও, আমাদের কাছে প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সামগ্রিক পরিষেবা মডেল নেই। তাই, সরকারি বেসরকারি এবং গবেষণা সংস্থার প্রচেষ্টায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। 

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, আইসিডিডিআর, নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ ওয়েবিনারে অংশ নেন। ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।