ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪২০

নির্জন পুকুরপাড়ে ঝুপড়িতে রাখা সেই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১০:০২ ২৮ এপ্রিল ২০২০  

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে নির্জন পুকুর পাড়ের ঝুপড়িঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখা নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে (২১) উদ্ধার করেছে পুলিশ।


সাত দিন পর সোমবার বিকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তাদের ঘরের পাশে একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে তাকে রেখেছে। এছাড়া পুলিশ ওই ঝুপড়িঘরটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

 

ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ২১ এপ্রিল ছুটিতে তিনি বাড়িতে ফেরেন। বাড়ি ফেরার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈয়ের নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখে।

 

ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

 

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনও বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।

 

কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ঝুপড়ি ঘর থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাদের ঘরের পাশে নতুন একটি ছাপড়া তুলে সেখানে তাকে রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই ঝুপড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই নারী স্বাস্থ্য কর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন,  আমি ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাকে আমরা কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তার কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর পাঠানো হব। ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা অমানবিকভাবে ঝুপড়িঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর