ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১২০৫

নৌকায় পেয়ারার হাট

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:২৬ ২০ আগস্ট ২০২১  

বরিশাল, পিরোজপুর, আর ঝালকাঠি। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের তিন জেলার ৫৫ গ্রামে পেয়ারার ফলন হয়। বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার উৎস। আমরা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম এই তিন জেলার আলিঙ্গন আটঘর–কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, আর ভিমরুলীতে।

 

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রায় শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সরু খালের পানির ওপর বসে পেয়ারা বাজার। সকাল সকাল বরিশাল পৌঁছলাম। লঞ্চ থেকে ঘাটে নেমেই মাহেন্দ্র বাহনে সোজা বানারীপাড়া ফেরি ঘাট। সেখান থেকেই ট্রলারে চেপে শুরু নৈসর্গিক পানি পথে ভীমরুলীর উদ্দেশে বের হলাম। ট্রলারে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর প্রথমে থামি কুড়িয়ানায়। স্থানীয় বাজারে হালকা নাশতা সারার পর আবারও ভটভট আওয়াজ তুলে ট্রলার চলে। ধীরে ধীরে অবারিত সবুজের ক্যানভাসে ডুবে যাই আমরা। থামি এবার আটঘর।

 

এখানে বসে পানির ওপর ডিঙি নৌকার হাট। শত শত ডিঙি ভাসিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতারা। পেয়ারা বিক্রির মৌসুম ঘিরেই চলে এই হাট। সারি সারি নতুন নৌকা দেখে বেশ ভালো লাগে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ডিঙি তৈরি করে ট্রলারে নিয়ে আসে এখানে, বিক্রির জন্য। আনার দৃশ্যটাও বেশ চমৎকার। 

 

এবার ছুটি ভাসমান পেয়ারা বাজার ভিমরুলী। যতই এগিয়ে যায় ট্রলার, ততই যেন মুগ্ধতা গ্রাস করে। স্বচ্ছ পানির খাল সরু হতে থাকে। কোথাও কোথাও দু পাশের গাছের ডাল দুই দিকে ছড়িয়ে এক অন্যরকম নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের রেখা টেনেছে। খালের ওপর আলোছায়া খেলে লুকোচুরি। সেই সঙ্গে তানিম আর তুহিনের ক্যামেরার সার্টারে ক্লিক ক্লিক করতে থাকে।

 

কবি জীবনানন্দ দাসের ধানসিঁড়ি নদী থেকে ধলহার খালের উৎপত্তি। এবার চোখে পড়তে শুরু করল বাজারে নিয়ে যাওয়া পেয়ারার নৌকা। ঝরনার কাছাকাছি গেলে যেমন পাথুরে বোল্ডার আর রিমঝিম শব্দ শুনে বোঝা যায়, আর বেশি দূর নেই; ঠিক তেমনি এখানে গানের আওয়াজে বুঝলাম চলে এসেছি কাছাকাছি। 

 

সকাল সাড়ে ৯টায় ট্রলার ভিড়ল ভীমরুলীর মন্দির ঘাটে। পাড়ে উঠে দেখি পেয়ারার চেয়ে মানুষের সংখ্যা বেশি। অবশ্য তখনো বাজার শুরুই হয়নি। এই সুযোগে আশপাশ হেঁটে বেড়াই। বেলা প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ বাজার জমতে শুরু করে। খালের দুদিক থেকে পেয়ারা ভর্তি ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো এসে জমতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফড়িয়া, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে পেয়ারা হাট পুরোই জমজমাট। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে যাওয়া মানুষের শোরগোল তো আছেই। 

 

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা এখনো পেয়ারাকে ‘গয়া’ নামেই ডাকেন এখানে। প্রতিদিন এই ভাসমান হাটে ১২ থেকে ১৮ শ মণ পর্যন্ত পেয়ারা বেচাকেনা হয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর বিশাল বিশাল বাগান থেকে বিক্রেতারা নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে আসে। বিক্রি হয় মণ প্রতি ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। স্থানীয়রা এখন বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে পেয়ারা বাগান করেন।

 

আশপাশের মোট ২১টি গ্রামের ৮৫০ হেক্টর জমির ওপর বর্তমানে ২ হাজার ২৫টি পেয়ারা বাগান আছে বলে জানা গেল স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে। শুধু কুড়িয়ানা গ্রামেই ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। গ্রামবাসীদের এখন অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস পেয়ারা চাষ। তাঁদের দেখাদেখি এখন বরিশালের বানারীপাড়াতেও শুরু হয়েছে পেয়ারার বাগান করা। এ অঞ্চলের পেয়ারা স্বাদে-রসেও বেশ মুখরোচক।

 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বরিশাল এসি/নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। তবে লঞ্চ আরামদায়ক। স্বাভাবিক দিনে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে রাত ৮টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বরিশাল জাহাজ ঘাট থেকে সিএনজি/ মাহেন্দ্রে কিংবা নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বানারীপাড়া বা ভীমরুলী যাওয়া যায়।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর