ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৭৩

পুরান ঢাকা থেকে সরেনি রাসায়নিক কারখানা-গোডাউন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:০৬ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের নয় বছরের মাথায় চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির পর আবারও রব উঠেছিল পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের কারখানাগুলো সরানোর।

এক বছর পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, রাসায়নিকের এই কারখানাগুলো সরেনি। এগুলো সরিয়ে নিতে একটি প্রকল্প গ্রহণ হলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।

ফলে চকবাজারসহ পুরান ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাগুলো আগের মতোই রয়েছে আগুনের ঝুঁকিতে।

২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাসায়নিকের কারখানা আর গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়া।

কিন্তু নয় বছরেও সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ার মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুন লাগার পর তা রাসায়নিকের পরশ পেয়ে নরককুণ্ড হয়ে উঠেছিল চকবাজারের চুড়িহাট্টা।

এরপর আবারও তদন্ত কমিটি, আবারও একই সুপারিশ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এবার যে ৩১টি সুপারিশ করে, তারমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের প্রথমটিই ছিল পুরান ঢাকা থেকে কেমিকেল কারখানা সরিয়ে নেওয়ার।

এরপর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে কারখানা সরাতে বেশ তৎপর দেখা গেলেও কিছুদিন পরই ঝিমিয়ে যায়  সেই অভিযান।


এক বছর পর এখন কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার আলামত চোখে পড়ছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানের।

 

তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারখানা সরানো নিয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে তার দৃশ্যমাণ কোনো অগ্রগতি দেখেননি তিনি।

“সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানা মালিকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ উদ্যোগে কারখানা রিলোকেট করার কথা ছিল, তা করা হয়নি। এখনও বহুসংখ্যক কারখানা, স্টোরেজ, দোকান এসব এলাকায় রয়ে গেছে।”

জিল্লুর বলেন, ২০০৩ সালের অগ্নি নির্বাপন ও প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী সেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তাও করছে না রাসায়নিক কারখানা ও গুদামের মালিকরা।

 

 

“এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমরা কী করলাম? প্রথমত তাদেরকে শক্তিপ্রয়োগ করেন এখান থেকে সরিয়ে দেওয়াটা বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়ত কাউকে আটক করার আইনগত ক্ষমতা আমাদের নেই,” আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, পুরান ঢাকাকে আগুনের ঝুঁকিমুক্ত করতে আবাসিক এলাকা থেকে এ ধরনের দাহ্য বস্তুর কারখানা ও গুদাম অবশ্যই সরাতে হবে।

“নইলে এসব দোকানপাট থেকে আবারও আগুন লাগতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা,” বলেন তিনি।

প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণই হয়নি?

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর। এরমধ্যে দুবার প্রকল্পের জায়গা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ১০ বছরেও নতুন প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি।

 

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ২০১১ সালে কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা মৌজায় ২০ একর জমি চিহ্নিত করে সেখানে ১৭ তলার কয়েকটি ভবন তৈরি করে রাসায়নিকের কারখানা ও গুদামের জন্য বরাদ্দ দিতে ডিপিপিও করেছিল।
সে সময় রাসায়নিক কারখানা মালিকদের তিনটি সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য একাধিকবার বসলেও তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

এর মধ্যে আট বছর পর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা’ প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পায়।

 

২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় বিসিকের এই প্রকল্পের আওতায় কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ ব্রাহ্মণকীর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমি চিহ্নিত করে ৯৩৬টি প্লট করার কথা বলা হয়।

প্রকল্পটিও সংশোধন হয় চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির পর। গত বছরের ১৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩০৮ দশমিক ৩৩ একর জমি নিয়ে ‘বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বিসিক।

 

সিরাজদিখানের কামারখান্দা, চিত্রকোট ও গোয়ালখালী মৌজায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১৫৪টি প্লট তৈরি হবে। এরমধ্যে ১ হাজার ২০৮টি এ-টাইপ, ৯০৪টি বি-টাইপ এবং ৪২টি এস-টাইপ প্লট করে রাসায়নিক কারখানা ও গোডাউনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সংশোধিত ডিপিপি ৩০ এপ্রিল অনুমোদন দেয় একনেক। সে বছরের ১২ জুন শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

প্রকল্পের জন্য এখন পর্যন্ত ১৪৩ কোটি ৩৮ লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর রাসায়নিকের গুদাম সরাতে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা
চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর রাসায়নিকের গুদাম সরাতে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা

তবে টাকা না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু যায়নি বলে জানিয়েছেন বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) মোহাম্মদ আতাউর রহমান সিদ্দিকী।
তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের যে টাকা প্রয়োজন, তা পাওয়া যায়নি।

“সংশোধিত ডিপিপিতে আরও যে অতিরিক্ত টাকা লাগছে, সেটা জমির টাকা আমরা চেয়েছি। জুনে টাকাটা হাতে পেলে আমরা টেন্ডার করব, অন্যান্য কাজ শুরু করব।”

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণে এই অর্থ বছরে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

 

এজন্য পরিকল্পনা কমিশনের বিশেষ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ পেতে ২২ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

“২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আমাদের এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের টাকাটা পেয়ে গেলে জুলাই মাসে মাটি ভরাট, রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, বাউন্ডারি ওয়ালের কাজগুলো আমরা শুরু করতে পারব।”

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর