ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২২১

প্রোস্টেট ক্যানসার দ্রুত নিরাময়ের উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১৯ ২২ এপ্রিল ২০২১  

প্রোস্টেট গ্রন্থি ছোট আখরোট আকৃতির অঙ্গ, যা পুরুষদের মূত্রথলির ঠিক নিচে থাকে। এ থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ আংশিকভাবে বীর্যের এক উপাদান হিসেবে শুক্রাণুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

 

যদি প্রথম পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, তাহলে প্রায় ১০০ শতাংশ রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। যদি রোগ শনাক্তকরণে দেরি হয় এবং প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে, তাহলে নিরাময়ের সম্ভাবনা ২৮ শতাংশে নেমে আসে।

 

সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বা সময়মতো প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। জীবদ্দশায় প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের প্রোস্টেট ক্যানসার হতে পারে। 

 

পরিবারে যদি বাবা, ভাই, চাচা বা মামার প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে পাঁচজনের মধ্যে একজন এতে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানাচ্ছেন কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনিয়েগলস হাসপাতালের চিকিত্‍সক, ইউরো-অনকোলজিস্ট এবং রোবোটিক সার্জন ডা. ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণের একটি উপায় হলো স্ক্রিনিং পরীক্ষা। সাধারণত একটি রক্ত পরীক্ষা এবং একটি মেডিক্যাল এক্সামিনেশন বা শারীরিক পরীক্ষায় তা বোঝা যায়। প্রসাবের কোনও লক্ষণ না থাকলেও স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো জরুরি। কারণ প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রসাবের লক্ষণগুলো দেখা যায় না। কিন্তু ভবিষ্যতে তা প্রাণহাণির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

 

প্রোস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং সাধারণত ৫৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সী পুরুষদের যাদের প্রসাবের কোনও লক্ষণই নেই; তাদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। তবে পরিবারে যদি বাবা, চাচা বা মামার প্রোস্টেট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, সেক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সের পুরুষদেরও স্ক্রিনিং প্রয়োজন। 

 

৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের সাধারণত স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয় না, যদি না তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন বা ওনাদের সাম্ভাব্য আয়ু ১০ থেকে ১৫ বছরের বেশি হয়।' এমনটাই জানাচ্ছেন ডা. বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য রক্ত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে 'প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন' (পিএসএ) পরীক্ষা। তিনি রোগীদের একটা ভুল ধারণা নিয়ে সতর্ক করেছেন। বলেনৈ, "যদি 'পিএসএ'র মান চারের কম হয়, তাহলে প্রোস্টেট ক্যানসারের কোনও সম্ভাবনা নেই"।

 

সেটা ঠিক নয়। কারণ, পিএসএ-র মান অনেক কারণের উপর নির্ভর করে। তাই পিএসএ পরীক্ষার সঠিক ব্যখ্যা ও সুনিশ্চিত পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইউরোলজিস্ট বা ইউরো-অনকোলজিস্টের মতামত নেওয়া উচিত্‍। কোনও কোনও পিএসএ পরীক্ষার মাত্রা দেথে চিকিত্‍সকেরা এমআরআই বা প্রোস্টেট বায়োপসির কথা বলতে পারেন।

 

শুধু সার্জারি বা শল্যচিকিত্‍সা দিয়ে প্রায় সম্পূর্ণভাবে (৯০%-১00%) প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব, যদি প্রথম বা দ্বিতীয় স্তরে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়। আর যদি তৃতীয় স্তরে রোগ ধরা পরে তাহলে মালটিমডালিটি বা বহুমুখি চিকিত্‍সার অঙ্গ হিসেবে শল্যচিকিত্‍সার পরে রোগীদের রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। 

 

তবে রেডিয়েশন থেরাপির তুলনায় বেশিরভাগ রোগীদের শল্যচিকিত্‍সার পরে হরমোন ইনজেকশন লাগে না। প্রোস্টেটের অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গে প্রসাবের লক্ষণ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। রোবোটিক বা যন্ত্রমানব সার্জারির তুলনায় রোগীর ব্যথা কম হবে, রক্তক্ষরণ কম হবে এবং কম দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। 

 

আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক নিবন্ধ অনুসারে ওপেন সার্জারির তুলনায়, রোবোটিক প্রোস্টেট সার্জারিতে এক বছর পরে খরচও কম পড়ে। প্রোস্টেট ক্যানসারে বিভিন্ন চিকিত্‍সার বিকল্প সত্ত্বেও রোগীদের প্রশ্ন হলো: প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে আমাদের কী করা উচিত্‍?

 

'এ বিষয়ে বিশেষ কিছু করার নেই; শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন, ব্যায়াম করুন এবং সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন,' ডা. বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন।