ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৩৯

ফসল ফলবে চাঁদে, প্রথমেই তুলো’র চাষ !

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৫৬ ১৯ জানুয়ারি ২০১৯  

কে বলল, চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি?

কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন, আমাদের থেকে প্রায় ৪ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকা চাঁদেও  ‘সোন ‘ ফলতে পারে? বেড়ে উঠতে পারে প্রাণ?

হ্যাঁ, ‘সোনা ফলল’ দৃশ্যত রুখুসুখু চাঁদে! প্রাণের বিকাশ হল। এই প্রথম। তুলো ফলল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে। তুলোর বীজ ফেটে বেরিয়ে এল রাশি রাশি তুলো। চাঁদেরই তাপমাত্রায়।

এই সুখবর দিয়েছে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘শিনহুয়া।’ মঙ্গলবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘পিপলস ডেলি’ টুইট করে দিয়েছেন চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডারে বীজ ফেটে বেরিয়ে আসা রাশি রাশি তুলোর ছবি। ক্যাপশন করেছে, ‘চাঁদে এই প্রথম মানবসভ্যতা জীববিজ্ঞানের পরীক্ষাটা সফলভাবে শেষ করতে পারল।`

 

কীভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল চাঁদে নামা চিনা ল্যান্ডারে?

 

আর সেটা ঘটল চাঁদের সেই প্রান্তে, যে দিকটা কোনও দিনই দেখা যায় না পৃথিবী থেকে। যে দিকে দিনকয়েক আগে এই প্রথম ‘পা’ রেখেছে সভ্যতা। নেমেছে চিনা ল্যান্ডার ‘চাঙ্গে-৪’। গত ৩ জানুয়ারি। তার নতুন একটা নামও হয়েছে। ‘ইউতু-২’।

 

এ বার আবাদ করা যাবে চাঁদে, মঙ্গলে...

 

চিন্তা মিটল বিজ্ঞানীদের।

চাঁদে, মঙ্গলে মহাকাশচারীদের জন্য আর লেটুস পাতা বা নানা রকমের পুষ্টিকর শাকপাতা পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হবে না। সে সব নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠাতে হবে না ‘রিসাপ্লাই মিশন’।

 

চাঁদ বা মঙ্গলে সভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তুলতে গেলেও ফসল উৎপাদনের ভাবনাটা আর ভাবতে হবে না, তা হলে?

 

অস্ট্রেলিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির অ্যাস্ট্রোনমার-অ্যাট-লার্জ ফ্রেড ওয়াটসন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অত্যন্ত সুখবর। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, চাঁদে বা মঙ্গলে মহাকাশচারীদের খাওয়ার জন্য শাক, আনাজপাতি ফলিয়ে নিতে আর বোধহয় অসুবিধা হবে না।’

 

একই কথা বলেছেন চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডারে ওই সফল পরীক্ষার মূল ‘কারিগর’ চিফ ডিজাইনার অধ্যাপক শি গেঙশিন। তাঁর কথায়, ‘যেখানে মাধ্যাকর্ষণ বল প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানেও কী ভাবে গাছপালা বেড়ে ওঠে, বেড়ে উঠতে পারে এই প্রথম আমরা তা বুঝতে পারলাম। যা আগামী দিনে মহাকাশে সভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তোলার পথে বড় দিশা দেখাবে।’

 

কী পরীক্ষা করা হয়েছিল চাঁদে?

 

চিনা সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে ‘চাঙ্গে-৪’ ল্যান্ডারে চাপিয়ে চাঁদে পাঠানো হয়েছিল তুলো, আলু, ইস্টের বীজ। আর ফ্রুট ফ্লাইয়ের ডিম। চাঁদের তাপমাত্রায়, পরিবেশে উদ্ভিদ আর প্রাণীর বিকাশ হয় কি না, দেখতে। বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন, উদ্ভিদের বাড়বৃদ্ধির জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি, সেই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটা চাঁদে হয় কি না। দেখতে চেয়েছিলেন, শ্বাস নিয়ে ফ্রুট ফ্লাইয়ের ডিম ফেটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে কি না। ল্যান্ডারে রাখা ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা আর তিন কিলোগ্রাম ওজনের একটি ক্যানিস্টারের মধ্যেই পরীক্ষাটা চালানো হয়।

 

চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডার ‘চাঙ্গে-৪’ এগিয়ে চলেছে .... রেখে যাচ্ছে পদচিহ্ন!

 

উৎক্ষেপণের পর পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে ল্যান্ডারটির লেগেছিল ২০ দিন। ওই ২০ দিন সুপ্ত অবস্থায় রাখা হয়েছিল বীজগুলিকে। কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা পরিবেশে। চাঁদে পৌঁছতেই গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে কম্যান্ড পৌঁছয় চিনা ল্যান্ডারে- ‘জল ছেটাতে শুরু কর।’ সঙ্গে সঙ্গে ঝরে পড়ল জল, যতটা প্রয়োজন। দেওয়া হল বায়ু। বেড়ে ওঠার জন্য দরকার আর যা যা পুষ্টিকর উপাদান, সব কিছুই। তাতেই কেল্লা ফতে! তুলোর বীজ ফেটে বেরিয়ে এল রাশি রাশি তুলো।

 

যেটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল

 

একটাই চ্যালেঞ্জ ছিল বিজ্ঞানীদের সামনে। তা হল, চাঁদের এক জায়গার তাপমাত্রা শূন্যের ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকার মতো হাড়জমানো ঠান্ডা তো অন্য এক জায়গার তাপমাত্রা গা ঝলসে দেওয়ার মতো ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ল্যান্ডারের গতির সঙ্গে সেই তাপমাত্রার রদবদল ঘটছে অতি দ্রুত হারে। এই পরিস্থিতিতে কী বেঁচে থাকবে বীজ, পারবে বেড়ে উঠতে গায়ে-গতরে, যথেষ্টই সংশয় ছিল।

তুলো সেই সংশয় ঝেড়ে ফেলল, অনায়াসে। তুলোর মতোই!  

 

৫০ বছর আগে সভ্যতা প্রথম পা রেখেছিল চাঁদে। ১৯৬৯ সালে চাঁদে নেমেছিলেন ‘অ্যাপোলো’র  তিন মহাকাশচারী। আমেরিকার পতাকা উড়েছিল চাঁদের সেই প্রান্তে, পৃথিবী থেকে দেখা যায় যে দিকটিকে।

 

৫০ বছর পর, ২০১৯-এ ফের ইতিহাস সৃষ্টি হল চাঁদে। দেখা গেল, পৃথিবী থেকে মহাকাশযানের পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া তুলোর বীজ ফেটে বেরিয়ে এল রাশি রাশি তুলো। আর সেই তুলো জন্মাল চাঁদের না-দেখা প্রান্তে।

আর এই ইতিহাসটা এগিয়ে যাওয়ার। এর আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ফসল ফলানো গিয়েছিল, পৃথিবী থেকে বীজ বা চারা নিয়ে গিয়ে। কিন্তু সেই মহাকাশ স্টেশন তো রয়েছে পৃথিবীর খুব কাছেই। ভূপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি হলে, ৪০০ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে। চাঁদ যে রয়েছে তার ১ লক্ষ গুণেরও বেশি দূরত্বে!

সূত্র : আনন্দবাজার