ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪২৫

ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:২৫ ১৩ আগস্ট ২০১৯  

ঘরে ঘরে পশু কোরবানি। কি গ্রাম, কি শহর,  মাংসের আধিক্য ঘরে ঘরে। মাংস সংরক্ষণ কঠিন হয়ে ওঠে। কোরবানির ঈদে মাংস বিতরণের পর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এতগুলো মাংস একসাথে সংরক্ষণের বিষয়টি।

মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেট করে রাখা সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায় হলেও বিকল্প আরও নানা পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। যাদের ফ্রিজ রয়েছে তাদের তেমন চিন্তা নেই। কিন্তু যাদের ফ্রিজের সুবিধা নেই, তাদের জন্য মাংস সংরক্ষণ বেশ চিন্তার। জেনে নিন, অনেক দিন পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণের কয়েকটি চমৎকার উপায়। 

জ্বাল দিয়ে : 
রান্না করা মাংস এক সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজের বাইরেই সংরক্ষণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে রান্নার পর মাংসে ঝোল থাকবে না, তেল থাকবে। আর রান্নার পর পাত্রটি ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। বেশি গরমে থাকলে মাংস নষ্ট হয়ে যাবে। চুলা বা রোদের তাপ থেকে দূরে রাখুন। চাইলে ফ্যানের বাতাসে রেখে দিতে পারেন। 
মাংস উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ছয় ঘণ্টা পর পর মাংসটি জ্বাল দিতে হবে, নাহলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এভাবে মাংস কয়েকদিন পর্যন্ত ভাল থাকে। জ্বাল দেয়ার সময় বেশি নড়াচড়া না করাই ভালো। খেয়াল রাখতে হবে, তলানিতে যেন না লেগে যায়। মাংসের টুকরা একটু বড় রাখবেন, নয়তো মাংস দ্রুত গলে যাবে। মনে রাখবেন মাংসে শুধু তেল থাকবে, পানি না।

শুকিয়ে : 
মাংস থেকে চর্বি ছাড়িয়ে কেটে অল্প লবণ ও হলুদ দিয়ে জ্বাল দিন। তবে বেশি সিদ্ধ করা যাবে না। এরপর পানি শুকিয়ে ঠাণ্ডা করুন। জিআই তারে লম্বা মালার মতো করে গেঁথে ৬-৭ দিন রোদে শুকাতে দিন। বৃষ্টির দিনে অনেকে চুলার ওপরেও মাংস শুকাতে দেয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাংস যাতে বেশিক্ষণ ছায়ায় না থাকে। এতে মাংসে ফাঙ্গাস পরতে পারে। ভালো করে শুকানোর পর এয়ারটাইট পাত্রে রেখে সংরক্ষণ করুন, যাতে বাতাস না ঢোকে। মাঝেমধ্যে মাংস বের করে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। এভাবে ৬ মাস পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করা যায়। রান্নার আগে মাংস ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রান্না করুন।
মাংসের নোনা : 
মাংসে লবণ দিয়ে ৩ থেকে ৪ মাস সংরক্ষণ করা যায়। এর জন্য সাধারণ লবণ নয়, কিউরিং সল্ট কিনে নিন। পুরো মাংসের টুকরা লবণ দিয়ে মেখে এয়ারটাইট ব্যাগে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাসের জন্য রেখে দিন। ফ্রিজের নরমালে রাখতে পারেন। এটি সাধারণত শীতের দেশের জন্য বেশি উপযোগী।

প্রেসার ক্যানিং : 
পৃথিবীজুড়ে ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে প্রেসার ক্যানিং। তবে এ জন্য আপনার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা দেখা যায় - এমন প্রেসার কুকার থাকতে হবে। লাগবে পরিষ্কার শুকনা কাচের বয়াম। প্রথমে পরিষ্কার কাচের জারে মাংস কেটে রাখুন। জারে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি দিন। এরপর মাংসের ওপরে এক চিমটি লবণ দিয়ে জার ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। জারটি প্রেসার কুকারে দিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার জন্য অপেক্ষা করুন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১০ থেকে ২০ মিনিট রেখে চুলা বন্ধ করে দিন। পুরোপুরি ঠাণ্ডা হলেই প্রেসার কুকার খুলে বয়াম বের করুন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই জার রাখলে এক বছরের বেশি সময় ধরে মাংস ভালো থাকবে। 

চর্বিতে ডুবিয়ে : 
মাংস জ্বাল দিয়ে তারপর চর্বিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এজন্য প্রথমে মাংস থেকে চর্বি ছাড়িয়ে মাঝারি সাইজে কেটে ধুয়ে সব পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে মাংস ও চর্বি নিন। মাংসের চেয়ে চর্বির পরিমাণ বেশি হবে। যাতে জ্বাল দিলে মাংস আধা ইঞ্চি চর্বির নিচে ডুবে থাকে। এবার মাংসের সঙ্গে পরিমাণমতো লবণ, গরম মসলা ও তেজপাতা দিয়ে বেশি আঁচে জ্বাল দিন। এবার দেখুন মাংসে পানি আছে কি না। পানি থাকলে জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে ফেলুন। মাংস চর্বিতে ডুবে থাকলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেকে রাখুন। পাত্রটি যাতে বেশি গরম জায়গায় না থাকে খেয়াল রাখুন। প্রথম সপ্তাহে দুবার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্তত একবার জ্বাল দিলেই হবে। এভাবে ১৫ দিন মাংস সংরক্ষণ করা যাবে।

লেবু ও লবণ :
কাজী লেবু ও লবণের সাহায্যে মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। মাংসগুলো মাঝারি আকারে কেটে হালকাভাবে ছেঁচে নেন। এরপর লবণ ও লেবুর রসে ঘণ্টা-খানেক ডুবিয়ে রাখেন, যেন মাংসের ভেতরে ভেতরে সেটা পৌঁছায়। এভাবে মাংস কয়েকদিন পর্যন্ত ভাল রাখা যায়। 
এছাড়া মাংস ভেজেও তিনি সেগুলো সংরক্ষণ করতে পারেন। এজন্য তিনি মাংস কেটে পরিষ্কার করে আদা বাটা, রসুন বাটা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মাংসটি কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখেন। এরপর গরম ডুবো তেলে মসলাসহ মাংসগুলো ভেজে নেন এবং তেল ছেঁকে নিয়ে তা সংরক্ষণ করেন।
সেদ্ধ : 
এছাড়া মশলা ছাড়াই শুধুমাত্র ডুবো তেলে মাংস সেদ্ধ করে সংরক্ষণ করা যায়। এজন্য হাঁড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে তেল গরম করে মাংস ডুবিয়ে পুরোপুরি সিদ্ধ করতে হবে।
দু-এক দিন পর পর তেলে ডোবানো মাংস গরম করে নিতে হবে। এভাবে ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করা যায়।

এছাড়া লবণ, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে মাংস পুরো একদিন মেরিনেট করে রাখলে সেটা ফ্রিজে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে মাংসের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।