ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭১৭

ফ্রিল্যান্সিং কি, কিভাবে করবেন, আয় কত?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৩ ২০ অক্টোবর ২০২০  

হালের সেরা পেশা ফ্রিল্যান্সিং। এর মাধ্যমে খুব কম সময়ে বেশি আয় করা যায়। তবে সফল ফ্রিল্যান্সার হতে দক্ষতার পাশাপাশি যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। আরও কয়েকটি গুণ থাকতে হবে। যেমন-পরিশ্রম করার মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও সততা আবশ্যক। 

 

ফ্রিল্যান্সিং কী?
ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো মুক্তপেশা। অর্থাৎ স্বাধীনভাবে কাজ করে আয় করার উপায়। সহজভাবে বললে, ইন্টারনেটে নানাধরনের কাজ করিয়ে নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে সেসব কাজ করানোকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। একে আউটসোর্সিংও বলে। এভাবে যারা কাজ করেন, তাদের ফ্রিল্যান্সার বলে।

 

অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা থাকে। যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসা সেবা ইত্যাদি।

 

ফ্রিল্যান্সিং করতে যা যা লাগবে:
 ১. কম্পিউটার/ল্যাপটপ
 ২. ইন্টারনেট কানেকশন/মডেম
 ৩. কিছু কাজের দক্ষতা
 ৪.  যথেষ্ট সময়।

১, ২ ও ৪ নম্বর সবার থাকে। কিন্তু ৩ নম্বরটা কারো নাও থাকতে পারে। সেজন্য দরকার শেখার ও জানার আগ্রহ। নিজেকে দক্ষ করে তোলার চাহিদা। উপরের ৪টি বিষয় নিশ্চিত হলেই সামনে এগোনো যায়।

 

ফ্রিল্যান্সার হতে যা যা করতে হবে
প্রথমে একটি মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এসময় নিজের ব্যক্তিগত ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর প্রোফাইলে গিয়ে সিভি তৈরি করতে হবে। তাতে উল্লেখ করতে হবে কোন কোন কাজে আপনি দক্ষ এবং চাহিদা রয়েছে। সেখানে নিজের ওয়েবসাইটের লিংকও দেয়া যায়। প্রোফাইল যত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে। ক্লায়েন্ট যেন তা দেখেই আপনার উপর ভরসা করতে পারেন।

 

দ্বিতীয়ত, অ্যাকাউন্ট খোলার পর সাইটগুলো ঘুরে দেখতে হবে। প্রথম কয়েক দিন কাজের জন্য প্রস্তাব করা যাবে না। বিশেষ করে প্রথম ৪-৫ দিন সাইটের বিভিন্ন ফিচার দেখতে হবে। সাইটের নিয়ম কানুন, সুযোগ- সুবিধা ইত্যাদি ভালো করে দেখে নিন। এতে পরে কাজ করতে সুবিধা হবে।

 

এরপর ধীরে ধীরে প্রোপোজাল দিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কাজ পেতে একটু দেরি হয়। ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য সহকারে প্রস্তাব করে যেতে হবে। প্রথম ২-৩টি কাজ ভালোভাবে শেষ করতে পারলে পেছন  ফিরে তাকাতে হবে না। পরে ক্লায়েন্টই আপনাকে খুঁজবে।

 

যা যা জানা জরুরি
অনলাইনে কাজ করার সময় কিছু বিষয় মনে  রাখতে হবে। কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো।

 

রেটিং/ফিডব্যাক
কোনো কাজ শেষ করার পর ক্লায়েন্ট তা রিভিউ করবে। পরে কাজের দক্ষতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে ফিডব্যাক দেবে।  এটি প্রোফাইল জব হিস্ট্রিতে সবাই দেখতে পারবেন। ফিডব্যাক দেখেই অন্য ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবেন ওই কাজের ওপর আপনার দক্ষতা কতটুকু। তাই যতটা সম্ভব ভালো কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। ৪.৫-৫ রেটিং ফিডব্যাক রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে পরবর্তীতে কাজের জন্য চিন্তা করতে হবে না।

 

র‌্যাংকিং
মার্কেট প্লেসগুলোতে ফ্রিল্যান্সারদের র‌্যাংকিং থাকে। কোনো ক্লায়েন্ট কাজের জন্য ওই সাইটের ফিল্যান্সার খুঁজলে সেই র‌্যাংকিং হিবেই ফ্রিল্যান্সারদের লিস্ট শো করে। র‌্যাংকিং খারাপ হলে আপনাকে সার্চে সবার শেষে দেখাবে। রেন্ট-এ-কোডারে গড় রেটিং, সর্বমোট কত টাকা ও ঘণ্টা কাজ করা হয়েছে তা দিয়ে অবস্থান নির্ধারিত হয়। র‌্যাকিংও রেটিংয়ের মতো কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

কাজের সময়সীমা
কাজ শেষ করার জন্য ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট সময় দেন। একে বলে ডেডলাইন বা কাজের সময়সীমা। কাজ যথাসম্ভব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। কখনো যদি মনে হয় ওই সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে না, তাহলে কাজ শুরু করার আগেই ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে। সময়মতো তা জমা দিতে না পারলে হয়তো কোনো পেমেন্টই পাওয়া যাবে না। ক্লায়েন্ট বাজে রেটিং/ফিডব্যাক দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান
ফ্রিল্যান্সিং আয়ে ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় ইউরোপ-আমেরিকা অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো এখন এদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের বড় উৎস। 

 

এর মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও সার্চ ইঞ্জিন ওপটিমাইজেশনসহ (এসইও) অনেক কাজ রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠেছে অসংখ্য বাংলাদেশির পছন্দের ক্যারিয়ার। 
দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

 

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) তথ্যমতে, অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বর্তমানে এদেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ নিয়মিত কাজ করছেন।

 

বাংলাদেশ আইসিটি ডিভিশনের তথ্যানুযায়ী, দেশের ফ্রিল্যান্সাররা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার আয় করছেন। অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারত। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই প্রতিবেশি দেশটির, দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থান অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ। একেক দেশ একেক ধরনের আউটসোর্সিং কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে।