ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬১২

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন প্রধানমন্ত্রী

দুরুল হক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৪৪ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। পরে তার অগ্নিঝরা বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বীর বাঙালি অস্ত্র ধরে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।

 

ফলে ২৪ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায় পূর্ব পাকিস্তান। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে। পরে দেশের জনগণের মুক্তির সংগ্রামে নামেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মনোযোগী হন। হাতে নেন একাধিক সময়োপযোগী প্রকল্প। কিন্তু তা দিনের আলো দেখেনি।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে হিংস্র হায়েনার দল সপরিবারে তাকে হত্যার মাধ্যমে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে।

 

ফলে লাখো পুরুষের তাজা প্রাণ ও হাজারো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায় শাসন-শোষণ, নিপীড়ন থেকে পরিত্রাণ পেলেও বাঙালির মুক্তি মেলেনি।

 

ভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে অভিভাবকহীন বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে আসেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি। এরপর অসংখ্যবার জেলে-জুলুমের শিকার হতে হয় তাকে। কিন্তু দমে যাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। অপশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তিনি। জীবনের হুমকি ও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ধীরে ধীরে দল ও দেশ গঠন করেছেন।

 

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি হন শেখ হাসিনা। পরে তার নেতৃত্বে স্বৈরাচার সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অবসান হয়। দেশে গণতন্ত্রের সূর্যের আলো দেখা দেয়।

 

তবে স্বৈরাচারের শিকড় থেকে যায়। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে জেনারেল জিয়ার দল বিএনপি। এবার দেশের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। তবু হার মানেননি শেখ হাসিনা। বিরোধী নেতা হিসেবে লড়াই চলমান থাকে তার। এর ফল হিসেবে ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তিনি। ওই বছরের ২৩ জুন সরকার গঠন করেই বঙ্ববন্ধুর স্বপ্ন পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েন অগ্নিকন্যা।

 

দেশ ও দশের কল্যাণে শেখ হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ সরকার একের পর সাফল্য অর্জন করতে থাকে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হয়। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। স্বজনসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে জামায়াত-বিএনপি ও বিদেশি কুচক্রী মহলের কূটচাল থামেনি। ২০০১ সালে আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি। এবার শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় হামলাকারীরা। এতে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। এ নিয়ে ২০বার তাকে হত্যাচেষ্টা করে দোসররা।

 

অবশেষে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশও রয়েছে উন্নয়নের মহাসড়কে।

 

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশমাতৃকার তরে, জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে গ্রহণ করেন একাধিক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প।

 

দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার তিনটি রূপকল্প- ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দান, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার, ভূমিও গৃহহীনদের বাড়ি দেয়াসহ নানা কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছে তারা।

 

দেশের আইসিটি খাতে বাস্তবমুখী ও কার্যকর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন জননেত্রী। এছাড়া তার নেতৃত্বে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে বাংলাদেশ।

 

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ প্রগতির মহাসড়কে। গণতন্ত্রের মানসকন্যার হাত ধরে সারাদেশে চলমান উন্নয়নের নানামুখী মেগাপ্রকল্প। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু ‘পদ্মাসেতু’। দেশের দক্ষিণপশ্চিমের মানুষের বহুকাঙ্ক্ষিত এই সেতু। রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, কক্সবাজার রেলপ্রকল্প, হাইটেকপার্ক, কর্ণফুলি টানেল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা, মাতারবাড়ি বন্দর, চারলেন মহাসড়ক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র,   অঞ্চলভিত্তিক ১০০ ইকোনমিক জোন।

 

পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবেলায় কূটনৈতিক সফলতা অর্জন করেছে সরকার। ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও গণটিকা কার্যক্রম জোরদারে উন্নত অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এছাড়া সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

 

বিশেষত শিক্ষাসুবিধা নিশ্চিতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং জন্মহার কমানো, গড় আয়ুবৃদ্ধি ও বাল্যবিবাহ রোধসহ উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য রয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের।

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছেন ইতোমধ্যেই তার সুফল পেতে শুরু করেছে মানুষ। তার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির কিছু দিক উপস্থাপন করছি-

 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়, খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিখাতে ভর্তুকি, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, কর্মসংস্থান, মুক্তিযোদ্ধা ভাতার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ফ্ল্যাট, জমি, রেশনসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে জাতির সূর্যসন্তান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের।

 

উপর্যুক্ত আলোচনায় আমরা বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম না নিলে আমরা আজ একটা মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় সংগীত পেতাম না। আর শেখ হাসিনার আবির্ভাব  না হলে আমরা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোট ও ভাতের অধিকার এবং একটা মর্যাদাশীল দেশ পেতাম না।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর