ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১১৭৯

বনলতার পর চাঁপাইবাসীর দাবি গৌড় এক্সপ্রেস

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০২ ২৫ জুলাই ২০১৯  

১৯৯০ সালের কোনও এক আষাঢ়ের রাতে বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরছি নাইট কোচে। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে বাস দ্রত চলতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। নগরবাড়ী ফেরিঘাটে পৌঁছায় রাত আড়াইটায়। কিন্তু বৃষ্টি এত বেশি মাত্রায় হচ্ছিল যে, ফেরিঘাটে ভিড়তে পারছিল না। সারারাত ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বৃষ্টি পড়ছিল রাতভর। এমতাবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে বাইরেও যাওয়া যাচ্ছিলো না। সকালে বৃষ্টি থামার পর ফেরির সিরিয়াল যখন পাওয়া গেল, তখন সকাল ৮ টা। সেদিন ঢাকা পৌঁছতে আমার সময় লেগেছিল প্রায় ২২ ঘণ্টা।

বর্তমানে দিন বদলেছে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা টু চাঁপাই বিরতিহীন বণলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এমন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়কেও সাধুবাদ জানাই। চাঁপাই নবাবগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিসের বাস্তবায়ন। সেই স্বপ্ন আজ আলোর মুখ দেখেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার এরূপ বৈপ্লবিক পরিবর্তন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার মানুষের জন্য সত্যিই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অগ্রযাত্রাকে সত্যিকার অর্থে আমাদের কাজে লাগানোর সময় এসেছে। জেলার সর্বস্তরের জনগণকে বুঝতে হবে, এ সুযোগ যাতে কোনওভাবেই নষ্ট না হয়। অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোকে এ সুযোগে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। এ ট্রেন সার্ভিস যাতে টেকসই হয়, সেজন্য রেল কর্তৃপক্ষকেও আমাদের সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

ফলের রাজা আমের রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় চাঁপাইকে। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এতদিন ফলটির যথাযথ বাজারজাতকরণ সম্ভব হচ্ছিল না। বণলতা এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস আমের বহুমুখী বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ অঞ্চলের মানুষ এখন এর বহুমুখী উৎপাদন নিয়ে ভাববে। উত্তরবঙ্গের উৎপাদিত কাঁচামাল যেমন-দুধ, টাটকা শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, পদ্মার ইলিশ, ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন, একসময় জ্যামের কারণে রাস্তায় নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে বিরতিহীন ট্রেন চালুর ফলে আমাদের সেই সমস্যা আশা করি আর থাকবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নিয়ে আমাদের অনেক গর্বের ইতিহাস রয়েছে। বিরতিহীন ট্রেন চালুর বিষয়টি কেন্দ্র করে এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে। একসময় এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদী নবাবদের বিলাসবিহার ও প্রমোদকেন্দ্র। নামকরণে সেরূপ ঐতিহ্যের প্রমাণ মেলে। তৎকালীন চম্পাকলি নামক এক বিনোদিনীর নাম থেকে চাঁপাই শব্দটির উৎপত্তি। সেই সূত্র ধরে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক চাঁপাই দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য বিনোদনের মিলনক্ষেত্র হতে পারে।

অতি স্বচ্ছ ও দূষণমুক্ত স্রোতধারাবাহী ঐতিহাসিক মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থান শহরটির। স্বাভাবিকভাবেই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। এখন শুধু দরকার বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনগনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়।

তৎসংলগ্ন প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট সোনা মসজিদ, এর প্রাঙ্গণে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের সমাধি, অদূরে অবস্থিত বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক পীর শাহ্ নেয়ামতুল্লাহর মাজার শরীফ এবং সোনা মসজিদ স্থলবন্দর, ইলামিত্রের তেভাগা আন্দোলন এখানকার মানুষের অতীব গর্বের বিষয়। এ ঐশ্বর্যকে বুকে ধারণ ও লালন করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

ঢাকা টু চাঁপাই বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য আমাদের জনগন মহাখুশি। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আপনার সদয় দৃষ্টি যদি আরেকটু প্রসারিত হয়।  ঢাকা টু সোনামসজিদ বিরতিহীন এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে সেটা আমদের জন্য আরও মহাখুশির বিষয়ে পরিণত হবে। ঢাকা টু সোনামসজিদ এ ট্রেন সার্ভিসের বিভিন্ন নান্দনিক নামকরণ হতে পারে। যেমন-গৌড় এক্সপ্রেস ট্রেন, শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ্ এক্সপ্রেস ট্রেন, ইলামিত্র এক্সপ্রেস ট্রেন, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এক্সপ্রেস ট্রেন ইত্যাদি।

প্রস্তাবিত ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এ এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। উন্মোচিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বার। এমন উদ্যোগ নেয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর নানামুখী কর্মতৎপরতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। স্বভাবতই সোনা মসজিদ স্থলবন্দরও অনুরূপ চেহারা পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মহামিলন ক্ষেত্রে পরিণত হবে।

ঢাকা থেকে সরাসরি বেনাপোল হয়ে ভারতে যাওয়ার সু-যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা-টু সোনামসজিদ বিরতিহীন গৌড় এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস(প্রস্তাবিত) চালু হলে প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের পথ আরও সুগম হবে। অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এতে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে।

অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে আরও উন্নত এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এমন অভিনব, সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ অত্যাবশ্যকীয়।