ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৯৮

বসন্ত এসেছে ভালোবাসার চাদর বিছিয়ে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:১৩ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন।


ভালোবাসার হাত ধরেই এসেছে বসন্ত। এতদিন পহেলা ফাল্গুন মানে বসন্তবরণের প্রথম দিন উদযাপিত হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। হলুদ পোশাকে, গাঁদা ফুল দিয়ে বাঙালি বরণ করে নেয় বসন্তের প্রথম দিনটি।


তবে পরদিনই রং বদলে যেত। কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারি থাকে ভালোবাসা দিবস। ভ্যালেন্টাইনস ডে। এ দিন শিশু থেকে যুবা- সবার হাতে হাতে লাল গোলাপ। পোশাকেও থাকে লাল-নীলের প্রাধান্য। প্রকৃতির কোলে নেমে আসে অনাবিল আনন্দ।


তবে গতবারের মতো এবারও বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। আজ তাই বসন্তের রং ভালোবাসার রঙে মিশে একাকার। এ জন্যই প্রকৃতিও বুঝি বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার আবেগমাখা সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে।


শাহবাগ-টিএসসি সড়কেও এ ভিড় লক্ষ করা গেছে। বয়সের ভেদাভেদ ও মত ভুলে সবাই বসন্তে একাকার হয়েছেন।


ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো..’।

বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও নানা অণুপ্রাস, উপমায়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত।


যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর নগরে, অতি কর্মব্যস্ত জীবনে যতই নিষ্প্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হন না কেন, বসন্তের এই দিনে তারা গেয়ে ওঠেন ‘বসন্ত বাতাসে..সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’


এসব অমর পংক্তিমালা আমাদের দেহে-মনে-বোধে-মননে তরঙ্গায়িত হয়ে উঠে বারবার।


আমাদের প্রকৃতিতে ও মনে বসন্তের আগমন অনিবার্য। শীতের শুষ্কতায় ম্লান প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে।


রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সজীবতার সঙ্গে নতুন দিনের প্রত্যাশায় আসে বসন্ত।


১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। রাজধানীর বুকের মানুষ, ঠাসাবুনোটের এই শহরে কেমনে কাটে তাদের বসন্তের প্রহর? ফাগুনের প্রথম দিনটি?


সকাল শুরু হওয়া মাত্রই নানা অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সকলে বরণ করে নেন বসন্তকে।


ফুলে ফুলে মিষ্টি রাঙায় রাঙিয়ে নেন নিজেদের। বড় প্রশান্তিময় সেই মুখশ্রীগুলো। হলুদ ও বাসন্তী রঙের সাজ-পোশাকে নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি জানান দেয় পয়লা ফাল্গুন।

তরুণীরা এই দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে কখন আসবে ফাগুনের এই দিন। যেদিন সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করবে।


নারীরা হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি, জামা পরে নিজেদের সাজসজ্জায় রাঙিয়ে তুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে। বাইরে বেরুলেই মনে হয় যেন প্রকৃতির বুকে ফাগুনের বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

আজ সেই কাঙ্ক্ষিত পয়লা ফাল্গুনে কিশোরী থেকে তরুণী সবাই ফুলের মালা হাতে আর চুলে জড়িয়ে ঘুরছে চারদিক। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নূপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই।


বসন্ত আমাদের জীবনে সত্যিকার হয়ে আসুক। অর্থবহ হয়ে উঠুক পলাশ-শিমুলের রঙ, কোকিলের কুহুতান। সকলকে পয়লা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।

 

 

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর