ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৯৩

বাঘ ধরা নয় বাগধারা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৯ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় বাগধারা দিয়ে বাক্য রচনা আমরা সবাই করে এসেছি। পুকুর চুরি দিয়ে বাক্য রচনা করতে গিয়ে কেউ "কাল রাতে আমাদের পুকুরটি চুরি হইয়া গিয়াছে" - কিংবা মাকাল ফল দিয়ে "মাকাল ফল অত্যান্ত পুষ্টিকর"  জাতীয় বাক্য রচনা করে  ক্লাসে হাসির খোরাক জুগিয়েছে। এরকম অভিজ্ঞতাও কমবেশি সবারই আছে l

 

বাগধারা আসলে কিছু শব্দগুচ্ছ যা ঠিক আক্ষরিক অর্থ বহন করে না। “একের  ভিতরে পাঁচ " জাতীয় বই থেকে আমরা তাই বাগধারার আসল অর্থ মুখস্থ করতাম- যেমন ইঁচড়ে পাকা বা এঁচোড়ে পাকা বলতে অকালপক্বতা বোঝানো হয়। আমরা জানতাম না কচি বা কাঁচা কাঁঠালের অপর নাম এঁচোড়। পশ্চিমবঙ্গে শব্দটি বহুল প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে কেউ এই শব্দটি ব্যবহার করে না। এই বাগধারায় অপরিপক্ক দশায় পেকে যাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে অল্প বয়সের 'পাকনা পোলা'কে।  এ হচ্ছে ইঁচড়েপাকার ইতিহাস।

 

সোনায় সোহাগা এইরকম একটি বাগধারা যা নিয়ে অনেকেরই মাঝে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করেছি বলে এই গৌরচন্দ্রিকা। সোনায় সোহাগা বলতে মূলত বোঝায় সার্থক মিলন (perfect combination), দুইয়ে মিলে যা পরিপূর্ণতা দেয়। উদাহরণস্বরূপ-  মেয়েটি যেমন সুন্দর, তেমনই বুদ্ধিমতী, এ যে একেবারে সোনায় সোহাগা।  

 

অনেকেই এটাকে স্বর্ণ এবং সোহাগের সংমিশ্রণ ভেবে থাকেন। কিন্তু এখানে আসলে সোহাগ বা আদরের কোনও ব্যাপার নাই। সোহাগা হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক লবণ (ক্ষার), ইংরেজিতে এর বাজারি নাম বোরাক্স বিড ( Chemically Sodium Tetraborate) l স্বর্ণকারেরা সোনার খাদ দূর করতে সোহাগা ব্যবহার করে থাকেন। সোনা গলানোর সময় সোহাগার উপস্থিতি প্রভাবকের কাজ করে, যা সোনার গলনাংক কমিয়ে দেয়। ফলে সহজে খাদ সরিয়ে বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া যায়।    

 

তাহলে এই বাগধারা দিয়ে বুঝতে পারছি যে সোনা এবং সোহাগার সার্থক মিলনে স্বর্ণ বিশুদ্ধতর হয়ে উঠে। 
তো যারা এতদিন ভেবেছেন যে সোনা (অলংকার) এবং সোহাগের (ভালোবাসা) মেলবন্ধনে পরিপূর্ণতা আনবেন তাদেরও হতাশ হবার কোনও কারণ নাই। অব্যাহত থাকুক সেই প্রচেষ্টা। আমি শুধু পেছনের কাহিনীটা শোনালাম।

 

লেখক: আনহারুল ইসলাম

ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর