ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৯৩

কোনভাবেই মান্যুয়াল পদ্ধতি নয়

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ঝুঁকি নেয়া হবে না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪৮ ১৭ এপ্রিল ২০১৯  

রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে কোন রকম ঝুঁকি নেয়া হবে না। জানালেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

আজ বুধবার দুপুরে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

মন্ত্রী এও জানান, দরপত্রের পর ৩ মাসের মধ্যে ভাঙার কাজ সম্পন্ন হবে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ভবনটি ভাঙার জন্য পরিবেশ তৈরি করা দরকার। এটি গুঁড়িয়ে দেয়ার পর যেখানে পড়বে, তার আশপাশে যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য দরকার প্রস্তুতি। তাছাড়া ইমারত ভাঙায় যারা পারদর্শী, তাদেরকে ২৪ তারিখের মধ্যে কোটেশন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। ২৪ তারিখের ভেতরে টেন্ডার পেয়ে ২৫ তারিখের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব, কোন্ সংস্থা উপযুক্ত এবং কাদের দিয়ে কাজ করানো যাবে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় রাজধানীর হাতিরঝিলের একাংশে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার প্রাথমিক কাজ। রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান জানান, ভাঙার আগে ভবনের মধ্যে থাকা জিনিসপত্র অপসারণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে ভবনটি খালি করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে কোন প্রক্রিয়ায় বা কিভাবে সেটি ভাঙা হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এখনো যাদের অফিস রয়েছে তাদের সব কিছু নিয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

 

মন্ত্রী আরও জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে সেনাবাহিনী নয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকই যথেষ্ট। আমাদের দেশেই এমন প্রযুক্তি আছে, এক ঘণ্টার ভেতরে ভবনটি ভেঙে স্তূপ আকারে জায়গাতে বসে পড়বে।

তিনি বলেন, অনেক ব্যয়ে অনেক পরিকল্পনার ভেতর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুন্দর ঝিলের মাঝখানে বিষফোঁড়ার মতো বিজিএমইএ ভবন করা হয়। নির্মাণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভবনটি গড়ে উঠেছে। আর সেই ব্যর্থতার দায় আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকেরই রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

 

মন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে ভবনটি আমাদের দখলে নিয়েছি। ভবনে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভবনের প্রয়োজনীয় সেবা সংযোগের মধ্যে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। বিদ্যুতের সংযোগ অনেক দূর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে গ্যাস-পানির লাইন সংযোগস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের বিজ্ঞান সম্মত, পরিবেশ সম্মতভাবে ভবন ভাঙার প্রস্তুতি নিয়েছি। যাতে কোনভাবেই প্রাণহানি বা ক্ষতির সম্মুখীন না হই, সেভাবেই এগোচ্ছি। এই ভবন ভাঙতে এরইমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি কোটেশন দাখিল করার জন্য।

মন্ত্রী বলেন, উপযুক্ত সংস্থা পেলে তাদের সমন্বয়ে, অন্যথায় আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজউকের পক্ষ থেকে ভবনটা উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার, সেই প্রক্রিয়ায় যাব। যেহেতু এ ধরনের ইমারত ভাঙতে হলে অন্যান্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সুযোগ দেয়ার বিধান রয়েছে, তাই সুযোগটি দেব। দরপত্রের পর উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে আমরাই ভাঙব।

 

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি বিজিএমইএ ভবন কর্তৃপক্ষকেই ভাঙার দায়িত্ব নেয়ার কথা, তবে মন্ত্রী বলেছেন, ভাঙার দায় দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। কারণ আমরা চাই রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা টিকে না থাকুক। একই সঙ্গে দেশবাসী জানুক যে, যেখানে বেআইনি ইমারত থাকবে বা স্থাপনা নির্মাণ করবেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

ভবন ভাঙতে ডিনামাইট ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন, কোনভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না। আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনটি ভেঙে ফেলব। সে ক্ষেত্রে নানা রকম পরিকল্পনা রয়েছে। যারা টেন্ডার দাখিল করবে তাদের মধ্যে দেখব সেই সংস্থার আধুনিক প্রযুক্তি আছে কি না? যদি না থাকে আমরা বাইরের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব। আমাদের সঙ্গে এরইমধ্যে অভিজ্ঞ নির্মাণ প্রযুক্তিতে যারা দক্ষ, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে। যদি সেরকম না পাই সেক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলব। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোনভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না, কোনভাবেই মানুষের জীবন এবং মালে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই ভবন ভাঙা হবে না।

 

সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সিভিল প্রশাসনই যথেষ্ট। এ জাতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকই যথেষ্ট। এলাকার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে আইন প্রায়োগকারী সংস্থার সাহায্যে নিতে পারি। ইমরাত ভাঙতে বাইরের অন্য কোন সংস্থার প্রয়োজন হবে না।'

 

তিনি আরও বলেন, যে পদ্ধতির কথা গণমাধ্যমে আসছে সবটা সঠিকভাবে আসেনি। ডিনামাইটের প্রচলিত অর্থ বোমা হলেও এটা আসলে একটা নির্মাণ পদ্ধতি। আমাদের দেশেই এমন সব পদ্ধতি আছে ভবনটি ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না। একঘণ্টার ভেতরে ভবনটি স্তূপ আকারে জায়গাতেই বসে পড়বে।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ করায় বিজিএমইএ ভাঙার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পে 'ক্যান্সারের মতো' বলে হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ে নিজ খরচে ভবনটি ভাঙতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগের কাছে আবেদন করে বিজিএমইএ।

কিন্তু ২০১৭ সালে ১৬ তলা এ ভবন ভেঙে ফেলার আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য বিজিএমইএর করা আবেদন খারিজ করে দেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। এরপরে নানা আইনি প্রক্রিয়ার পর ওই ভবন থেকে সরে যেতে কয়েক দফা সময় পায় পোশাক রফতানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

শেষ পর্যন্ত আর সময় চাইবে না মর্মে মুচলেকা দিলে আদালত গেল বছর ভবন থেকে সরে যেতে এক বছর অর্থাৎ ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয় বিজিএমইএকে। কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনটি দুটি বেজমেন্টসহ মোট ১৬ তলা। তবে নিজেদের জন্য কয়েকটি ফ্লোর রেখে বাকিগুলো ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।

বিজিএমইএ ভবন এখন উত্তরায়

এদিকে, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্মাণাধীন ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনটি জানিয়েছে, উত্তরায় ১৩ তলা ভবন নির্মাণ চলছে এবং প্রায় ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়েছে। পুরো ভবনের কাজ শেষ হতে আরও দু’বছর লাগবে।