ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৯১

বেশি খেতে নেই বাদাম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:০৮ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০  

রাস্তায় হাঁটছিলাম। দেখা হলো এক পুরনো ছাত্রের সঙ্গে। সে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ থাকার ও হাঁটার ইচ্ছা প্রকাশ করল। আমরা পাশাপাশি হাঁটছি। স্যার বাদাম খাবেন? খাব, তবে আমি পয়সা দেব। না স্যার, টাকাটা আমাকে দিতে দিন। কেন? আমি সবাইকে বলে বেড়াতে পারব- আজ মুনীর স্যারকে বাদাম খাইয়েছি। এটা আমার জন্য একটি ঘটনার মতো ঘটনা হয়ে থাকবে। 

 

ঠিক আছে, ৫ টাকার বাদাম নাও। স্যার, এত অল্প? বাদাম ভালো, তবে বেশি খেতে নেই। কেন স্যার? কারণ এতে প্রচুর ফ্যাট থাকে যা স্বাস্থ্যকর নয়। তুমি জান বাদামে কি আছে? জানি, এতে প্রোটিন, ভিটামিন আছে। আর আপনি তো বললেন ফ্যাট আছে। 

 

বলি শোন। ১০০ গ্রাম বাদামে মোট ক্যালরির পরিমাণ হলো ৫৬৭। প্রোটিনের পরিমাণ ২৫.৮ গ্রাম, শর্করা ১৬.১ গ্রাম, সুগার ৪.৭ গ্রাম, আঁশ ৮.৫ গ্রাম, ফ্যাটের মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৬.৮ গ্রাম, মনোআনস্যাচুরেটেড বিশেষ করে অলিক অ্যাসিড ২৪.৪৩ গ্রাম, পলিআনস্যাচুরেটেড (লিনোলিক অ্যাসিড, ইকোসাট্রাইয়েনোয়িক অ্যাসিড, ইকোসাট্রেট্রাইয়েনোয়িক অ্যাসিড, ডকোসাহেক্সাইনোয়িক অ্যাসিডসহ আরো অনেক) ১৬.৫৬ গ্রাম, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ১৫.৫৬ গ্রাম। 

 

এ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। তবে বেশি ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য ভালো নয়। কারণ এটি হার্টের শিরা-উপশিরার আভ্যন্তরীণ দেয়ালে সাইটোকাইন প্রস্তুতের মাধ্যমে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। তাই বাদাম খাওয়া খুব ভালো, তবে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে নয়।

 

প্রতিদিন একজন পুরুষ ৫৬ গ্রাম এবং একজন নারী ৪৬ গ্রাম বাদাম খেতে পারেন। 
বাদামে প্রচুর ভিটামিন আছে। এর মধ্যে রয়েছে থায়ামিন, রাইবোফ্লেভিন, ফোলিক অ্যাসিড, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, কোলিন, পিরিডক্সিন (ভিটামিন বি-৬), ভিটামিন ই। খনিজের মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ফসফোরাস, কপার ইত্যাদি। 

 

দেখ আল্লাহর কুদরত। ছোট্ট একটা বাদামে তিনি কত নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সৃষ্টি করে রেখেছেন। তবুও আমরা শুকরিয়া আদায় করি না। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ! আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।

 

দুটি মিনি ঠোঙ্গায় বিক্রেতা দুজনকে বাদাম দিলেন। এখানে কত বাদাম আছে গুণে দেখ তো? ও গুণে বলল- স্যার, ১০টি। তার মানে একটি বাদামের দাম ৫০ পয়সা। বাদামের স্ট্যাটাস তো কম নয়? কার উন্নতি হচ্ছে বুঝতে পারলাম না- বাদামের, মানুষের না দেশের? 

 

ঠিক আছে, চল হাঁটতে হাঁটতে বাদাম খাই। তবে এর খোসা নিচে ফেলতে পারবে না। কি করব স্যার? পকেটে রাখ, অত:পর সাইদ খোকনের বিনে (এখন সাঈদ খোকন নেই, বিনও নেই) ফেলবে অথবা বাসায় গিয়ে বিনে ফেলবে। 

 

স্যার, এ অপরিষ্কার শহরে বাদামের খোসা ফেললে আর কতটুকুই বা অপরিষ্কার হবে? বললাম - সবাই তোমার মতো চিন্তা করে বলেই ঢাকার আজ এ করুণ অবস্থা। সবাই যদি আমার মতো চিন্তা করত, তবে যেকোনো সভ্য দেশের শহরের মতো ঢাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতো। মনে রাখবে- বাদাম খাওয়ার অধিকার সবার আছে কিন্তু খোসা ফেলে শহর অপরিষ্কার করার অধিকার কারো নেই।

 

স্যার, আপনার কাছ থেকে আজ একটি ভালো অভ্যাস শিখলাম। না, সব শেখনি, শিখতে হলে তোমাকে আবার শিশু বয়সে ফিরে যেতে হবে। তুমি বিয়ে করেছ? না স্যার। বয়স হলে করে ফেল। বিয়ে করে তোমার বউকে এ ভালো অভ্যাসগুলোর কথা বলবে। অত:পর ছেলেমেয়ে হলে তাদেরও। কারণ বাবা-মা ও গৃহ হলো শিশুদের আদব-কায়দা, নম্রতা-ভদ্রতা, আচরণ ও মানবিক গুণাবলি শেখার উৎকৃষ্ট প্রারম্ভিক শিক্ষক ও পাঠাগার। 

 

প্রতি ঘরে এ প্র্যাক্টিস চালু হলে আশা করা যায় একসময় আমরা না হলেও পরবর্তী প্রজন্ম সভ্য হতে পারবে এবং আমাদের এ অসহায় মাতৃভূমিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেষ্ট হবে। দেখছ না, আমাদের দেশের যুবক-যুবতী ও মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয়ে কেমন ধস নেমেছে? এ অবক্ষয় ও ধস রোধ করা না গেলে এদেশের কোনো ভবিষ্যত নেই। তাই আমাদের এ দেশকে বাঁচাতেই হবে।

 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।