ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৮১

ভারত নিজের স্বার্থে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে: বাণিজ্যমন্ত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৮ ৩ জানুয়ারি ২০২১  

ভারত নিজেদের স্বার্থে কখনো পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে। আবার কখনো খুলে দেয়। যেমন এখন তারা খুলে দিয়েছে। এমন অবস্থায় দেশটি থেকে নিত্যপণ্যটি আমদানি করতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে কিনা, সিই বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।


রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুল্ক আরোপ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।


গেল সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। তখন অন্য দেশ থেকে তা আমদানি শুরু করে শেখ হাসিনা সরকার। দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে ওই সময় পণ্যটির ওপর ৫ শতাংশ যে শুল্ক ছিল, সেটি বাতিল করা হয়। যা এখনো বহাল আছে।


বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, শুল্ক আরোপ করা হলেও সেটা যাতে ভারত ছাড়া অন্য যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল, তাদের ওপর প্রভাব না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।


তিনি বলেন, আমাদের স্ট্র্যাটেজিটা হলো আমরা কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবো, আবার আমরা ভোক্তাদের কথাও চিন্তা করবো। আগামী তিন বছরে যাতে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বনির্ভর হয়, তা অর্জনের চেষ্টা করা হবে। এজন্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে তারা যাতে মুনাফা অর্জন করতে পারে, সেই বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা হবে

 

আগামী তিন বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন তিন লাখ টন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। দেশী পেঁয়াজের দাম যাতে একেবারে পড়ে না যায়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকরা।


দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা বলছেন, এরই মধ্যে যে পেঁয়াজ উঠেছে তা বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। এমনি একজন রাজবাড়ির জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার তালুকপাড়া গ্রামের কৃষক লতিফ মোল্লা। এ বছর সাড়ে তিন একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে মুড়িকাটা নামের পেঁয়াজ।

 

তবে লতিফ মোল্লা বলছেন, এবার পেঁয়াজে লাভের মুখ দেখার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ নিত্যপণ্যটি চাষে যে খরচ পড়েছে, এর চেয়ে অনেক কম দামে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে। যদি বাইরের মাল (পেঁয়াজ) না আসে, যখন আমাদের এ আবাদগুলা ওঠে, তাহলে আমরা একটু বাঁচতে পারি। কিন্তু বাইরের মাল সরকার আমদানি করে - এজন্য আমরা লস খাচ্ছি।

 

দুই বিঘা জমিতে লালতীর আর মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়ুয়াডাঙ্গি গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন। এরই মধ্যে তার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তীরকাটা উঠতে সময় লাগবে আরো দুয়েক মাস।


তিনি বলেন, প্রতিমণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজারে এ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে প্রায় অর্ধেক দামে। তা যাচ্ছে ৮০০ টাকা করে। আর আমার খরচ হইছে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা।


সোহরাব হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে মার্চে যখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হবে, তখন দাম মারাত্মকভাবে পড়ে যাবে। এখনই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে বতরের সময় যখন পেঁয়াজ উঠবে তখন তো কেউ ৩০০ টাকা করেও নেবে না।


রাজধানীর স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুদিন আগে থেকেই দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা করে কমতে শুরু কমে ২৫ টাকায় নেমেছিল। তবে পেঁয়াজে এখনো ঢাকায় এসে না পৌঁছানোয় প্রতি কেজিতে দাম কিছুটা বেড়ে আবার ৩২ টাকায় দাঁড়ায়।


কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মল্লিক জানান, বুধবার থেকে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে দেশী পেঁয়াজের দাম আবার কমে যাবে। দেশীর দাম কমে যাবে। ভারতের ঢুকলেই দেশীর দাম কমে যাবে।

 

গেল বছরের সেপ্টেম্বরে যখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করে, তখন দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হয়। ওই সময় বাজার স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক, মিশর ও চীন থেকে তা আমদানি করে সরকার।

 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আসছে যা খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হবে। ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। প্রতিবছর দেশটি প্রায় ২০ লাখ টন তা রপ্তানি করে।

 

দক্ষিণ এশিয়ার রন্ধনপ্রণালীতে পেঁয়াজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এক্ষেত্রে ভারতের ওপর বাংলাদেশ ছাড়া নেপাল, মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।