ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১১৯৩

বিশ্বে একচ্ছত্র ক্ষমতাশালী জাকারবার্গ

ভেঙে দেয়া হবে ফেইসবুক !

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৫৫ ১১ মে ২০১৯  

একসময় ঘরোয়া একটি পরিসরে ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। পরবর্তীতে রূপ নেয় বিশাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এর ভিত রচনায় মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গী ছিলেন ক্রিস হিউজ। এখন তিনিই চাচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এ কোম্পানির অবলুপ্তি !

 

নিউ নিয়র্ক টাইমসে গেল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নিবন্ধে হিউজ লিখেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখন উচিৎ ফেইসবুক ভেঙে দেয়া।

 

তার মতে, জাকারবার্গ বিশ্বে এখন একচ্ছত্র ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছেন এবং এমন ক্ষমতা কোনো বেসরকারি কোম্পানি তো দূরের কথা কোনো সরকারের কারও নেই।

 

২০০৪ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় হিউজসহ কয়েকজন বন্ধুর যৌথ উদ্যোগে জাকারবার্গ যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, তা-ই বিশাল কলেবর নিয়ে আজকের ফেইসবুকে পরিণত হয়েছে।

 

২০০৬ সালে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর পর ইন্টারনেট জগতে কোটি কোটি মানুষ এখন ফেইসবুকে যুক্ত। এই কোম্পানির সম্পদমূল্য এখন শত বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই।

 

কোম্পানির রমরমা অবস্থার সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জাকারবার্গ।

 

জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক বছরে বিতর্কও সঙ্গী হয়েছে ফেইসবুকের; গ্রাহকের তথ্য চুরি, ভুয়া তথ্য প্রচার ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সামলাতে হচ্ছে একে।

 

বিতর্ক এড়াতে জাকারবার্গ ফেইসবুকে কিছু নিয়মকানুন আনতে চাইছেন; তার মধ্যেই তার পুরনো বন্ধু হিউজের কঠোর লেখাটি প্রকাশ হল।

 

হিউজ লেখেন, মার্ক ভালো, সদয় মানুষ। কিন্তু আমার ক্ষোভ সেখানে যে লাভের লোভে সে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিসর্জন দিয়েছে, ক্লিকের লোভে বিসর্জন দিয়েছে শালীনতাকে।

 

এক দশক ধরে ফেইসবুকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই হিউজের; তার এখন হতাশা, শুরুর পর্যায়ে কেন চিন্তা করেননি যে ফেইসবুকের নিউজ ফিড বিশ্বের সংস্কৃতিকে এত পরিবর্তন ঘটাতে পারে, নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে পারে, জাতীয়তাবাদী নেতাদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

 

প্রযুক্তি খাতে ফেইসবুকের মতো একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে নতুন তদারকি সং স্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান হিউজ।

 

বলেন, জাকারবার্গ একটি দানব তৈরি করেছে, যা অন্য উদ্যোক্তাদের পথে বসাচ্ছে, গ্রাহকের পছন্দও নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিৎ যে অদৃশ্য হাতের জাদুতে আমরা যাতে হেরে না যাই।

এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে তিনটি পৃথক কোম্পানি হিসেবে ভাগ করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকের সহ–প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজের  ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক।

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা দেশটির বিচার বিভাগের কাছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টি–ট্রাস্ট তদন্ত’চালানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুক এখন সুবিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণ করতে ও ভেঙে ফেলতে এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের ওপর চাপ বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রকেরা তথ্য বিনিময় করার চর্চা, ঘৃণিত বক্তব্য ও ভুয়া খবর ছড়ানো ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন আইনপ্রণেতা বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলার পাশাপাশি ফেডারেল প্রাইভেসি আইনের কথা তুলছেন।

 

ক্রিস হিউজ মার্ক জাকারবার্গের কলেজের সহপাঠী। তাঁরা একই ঘরে থাকতেন।

বর্তমানে ফেসবুকের ২৪০ কোটির কাছাকাছি ব্যবহারকারী রয়েছেন।

এর বাইরে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রামের মতো সেবা রয়েছে। প্রতিটি সেবার ক্ষেত্রে ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছেন।

২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম ও ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয় ফেসবুক।

 

মার্ক হিউজ বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামকে পৃথক কোম্পানি করা হোক।

 

হিউজের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছে। শুক্রবার ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ফ্রান্সে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে আলোচনা করেন।

 

ফেসবুকের মুখপাত্র নিক ক্লেগ বিবৃতিতে বলেন, সফলতার সঙ্গে দায়িত্ববোধের বিষয়টি গ্রহণ করে ফেসবুক। সফল একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে টুকরো করে দায়িত্বশীলতা চাপিয়ে দিতে পারে না। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায় নেওয়ার বিষয়টি অর্জন করতে হবে। এটাই জাকারবার্গ বলছেন।

 

২০০৪ সালে হার্ভার্ডের ডরমেটরিতে মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র অ্যাডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিজ ও ক্রিস হিউজ মিলে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সালে ফেসবুক ছেড়ে দেন হিউজ। পরে এক লিংকডইন পোস্টে তিনি জানান, তিন বছরের কাজের জন্য ৫০ লাখ ডলার পান তিনি।

 

হিউজ বলেন, ১৫ বছর আগে হার্ভার্ডে থাকতে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এরপর এক দশকের বেশি সময় আমি এর সঙ্গে নেই। কিন্তু আমার মধ্যে রাগ ও দায়িত্ববোধের অনুভূতি রয়েছে।

 

২০১৬ সাল থেকে প্রাইভেসি ও ভুয়া তথ্যের কেলেঙ্কারিতে ফেসবুক জড়িয়ে পড়ার পর থেকে বড় পদের কয়েকজন কর্মকর্তা ফেসবুক ছেড়েছেন। এর মধ্যে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাতারাও আছেন।

 

ফেসবুক ব্যক্তিগত মেসেজিংকে আরও গুরুত্ব দেয়ার ঘোষণার সময় গত মার্চ মাসে জাকারবার্গের ঘনিষ্ঠ প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স ফেসবুক ছেড়ে দেন।

 

ফেসবুকের কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এর মূল ব্যবসা কিন্তু ঠিক আছে। গত দুই প্রান্তিকে আয়ের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

হিউজ বলেছেন, ফেসবুকে প্রাইভেসি বা অন্য যেকোনো ত্রুটির কারণে জাকারবার্গকে দায়ী করতে হবে।

 

এর আগে ডেমোক্রেটিক সিনেটর রন ওয়াইডেন বারবার প্রাইভেসি লঙ্ঘনের কারণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়ী করার কথা বলেন।

 

সম্প্রতি রিপাবলিকানদের কাছ থেকেও একই সুর উঠেছে। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানের কয়েকজন সিনেটর ফেসবুকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সমঝোতার সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, ফেসবুকের কঠোর শাস্তি আর তাদের ব্যবসায়িক চর্চায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক।

 

হিউজ বলেছেন, ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে তিনি জাকারবার্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর কিছু পরেই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মতো কেলেঙ্কারি মুখে পড়ে ফেসবুক।

 

হিউজের ভাষ্য, জাকারবার্গ ভালো ও দয়ালু মানুষ। কিন্তু আমি তাঁর নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে ক্লিকের আশায় ব্যবসা ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে তোলার লক্ষ্যের ওপর রাগ দেখাচ্ছি।

 

হিউজের সমালোচনার জবাবে ফেসবুকের সাবেক নিউজফিড বিভাগের প্রধান অ্যাডাম মোসেরি বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার জন্য প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেয়ার সঙ্গে একমত নই। সম্মত থাকলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।