ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৮০

মনমতো শট না নেয়া পর্যন্ত থামতেন না তিনি

কাজল ঘোষ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৩২ ৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

মাহফুজুর রহমান আমাকে চলচ্চিত্রের পথ দেখিয়েছেন। আমার জীবনে তার অবদান কোনদিন ভোলার নয়। নিজ সন্তানের মতোই আদর দিয়েছেন আমাকে ও আমার পরিবারকে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন ফিল্ম নির্মাণে আমার অবস্থা যখন তথৈবচ তখন তিনি উদারভাবে এগিয়ে এসেছেন। এক সকালে মাহফুজ ভাই, ওনাকে বাবাই বলে ডাকতাম ছুটে গেলাম পুরোনো ঢাকার চকবাজারের বাসায়। এক পেয়ালা চা নিয়ে হরিপদ দত্তের ‘ঊর্দি’ গল্পটি পড়ে শোনাতেই বললেন, ‘ আর একবার পড় বাপ। এইটা কি লিখছে? কোথাও কোথাও থামতে বললেন। কিভাবে শুরু আর শেষ হবে ভাবলেন। ফিল্মের ক্লাইমেক্স নিয়ে কিছু কথা বললেন। তারপর বললেন, বাপ, আমার যা করা দরকার তাই করব। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। অন্যকিছু নিয়ে ভাব।’ সেই থেকে শুরু। একদম সম্পাদনার টেবিল পর্যন্ত তিনি আগলে রেখেছেন আমাকে, আমার ‘ঊর্দি’কে।

ছবিটি বানাবার সময় অনেক রকম আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়েছিল। সতীর্থ, বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ঋণ করতে হয়েছে। অনেক সময় দুপুরে খাবার পয়সাও যোগাড় করতে পারিনি শুটিং ইউনিটের। এফডিসি থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে শুটিং করেছি সবকিছু ধৈর্য্য সহকারে সামলেছেন তিনি। দিনশেষে মাথায় হাত রেখে সাহস দিয়েছেন। বলেছেন, ‘মালিক যা লিখে রেখেছে তাই হবে। তোমার কিচ্ছু করার নাই বাপ।’ 
মনে পড়ে, ‘উর্দি’র স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেকটা সময় কাটিয়েছি তিনি ও আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জয়ী দিলু ভাইয়ের (দিলু খন্দকার) গ্রিণ রোডের বাসায়। ডালপুড়ি আর বাকরখানি, কখনওবা এফডিসি থেকে খিচুড়ি, ডিম ভাজি সহযোগে চলত দিনভর ফিল্মের গতি, প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা। বলতেন, ফিল্মের শুটিং স্ক্রিপ্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা যত ভাল হবে, ফিল্মের কাজ তত বেশি ভাল হবে। আগে আমরা কি করতে চাই এটা ঠিক করা জরুরি। ডিরেক্টর তার চোখ দিয়ে কি দেখতে চায় এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় কোথায় একটু পরিবর্তন করলে ‘ঊর্দি’ ফিল্ম হতে পারে তা নিয়ে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ করেছেন। যখন দৃশ্যধারণ করতে হবে তখন ধীর স্থির ভাবে ক্যামেরা নিয়ে টিমের সবার আগে দাঁড়িয়েছেন। এত বড় মানুষ। এত বড় ক্যামেরাম্যান। যিনি কিনা আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতেছেন তিনি যখন দৃশ্যধারণ শুরু করতেন আমাকে ডেকে বলতেন, কাউন্ট ডাউন করতে। ঘাড়ে হাত রেখে বলতেন, ফিল্মের সবশেষ কথা ডিরেক্টরই। বাপ নতুনরা, এই তোমরাই ফিল্মে আশার কথা শোনাবে।

এক অসম্ভব শক্তিমান মুানষ ছিলেন তার কাজের জায়গায়। মনমতো শট না নেয়া পর্যন্ত থামতেন না। দেখেছি, কিভাবে একজন মানুষ বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন; আবার বৃষ্টি চলে যাওয়ার জন্য ঠাঁই চেয়ে আছেন। পর্যাপ্ত রোদের দরকার, ক্যামেরা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কোন তাড়া নেই, যা চাইছেন, তা যতক্ষণ না পাচ্ছেন খামতি নেই, থামতি নেই। 
তিনি চলে গেছেন অজানার দেশে। মাটির মানুষ মাটির সাথে মিশে গেছেন। কত কথা মনে পড়ছে। নতুন বেশকটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথাও হচ্ছিল টুকটাক। আমার অনেক জমানো কষ্টের ভিড়ে আরও অনেক কষ্ট তুলে দিলেন বাবাই। বাবাই আপনি যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন, ভাল থাকুন। আপনার জন্য সীমাহীন শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা। আপনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন আপনার কাজের মাধ্যমে।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর