ঢাকা, ২৭ নভেম্বর বুধবার, ২০২৪ || ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০৬৮

পরিষ্কার হচ্ছে পোড়া ধ্বংসাবশেষ

মনের ক্ষত দূর হবে কীভাবে ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪১ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায় আগুনে পোড়া ভেঙেচুরে যাওয়া ভবনগুলোর কালো অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে যেন চরম নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভবনগুলোর সামনের রাস্তা ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কারের কাজ করেন।

 

চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে পানি ছিটিয়ে ও ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সিটি করপোরেশনের বড় ট্রাকে পানি এনে রাস্তা ও আশপাশ পরিষ্কার করা হয়।

এর মধ্যে নন্দকুমার দত্ত সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের নিচতলা থেকে পুড়ে যাওয়া একটি শিশুর হাতের খণ্ডিতাংশ খুঁজে পান এক ব্যক্তি। এরপর সেদিকে ঘিরে ধরে লোকজন।

 

চুড়িহাট্টার আগুন লাগা ভবনগুলোর সামনের গোল চত্বরের একপাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে আগুনে পোড়া গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবকাঠামো। পুরান ঢাকা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রচুর মানুষ ও গণমাধ্যম কর্মীরা ভিড় সমান শুক্রবারেও। বুধবার রাতের আগুনের ভয়াবহতা দেখতে এসেছেন তারা। সবার চোখে-মুখেই বিস্ময় আর শোকের চিহ্ন।

 

আশপাশের লোকজন বলছেন, পুরান ঢাকার বেশিরভাগ বাড়ির নিচে বিভিন্ন ধরনের গোডাউন ভাড়া দেয়া হয়। এসবের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাসা ভাড়া বা মেস ভাড়া দিলে গ্যাস-পানির সংযোগ দিতে হয়। গোডাউন ভাড়া দিলে এসবের ঝামেলা থাকে না এবং ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়।

 

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজ চলার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে ভবনগুলোর মধ্যে সুগন্ধির ক্যান ছাড়াও লাইটার রিফিল করার ক্যান ছিল। এগুলো সব অবশ্যই কেমিক্যাল।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করার জন্য ১১ সদস্যর কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কমিটির সদস্যরা।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার বিম ও কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের সাপোর্ট ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।

চুড়িহাট্টায় গত বুধবার রাতে আগুনের ঘটনায় ৬৭ জনের লাশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজা। এর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ৭৮ জন উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে ৪১ জন। ঘটনাস্থলে এখনো ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট পর্যবেক্ষণের কাজ করছে। ঘটনাস্থলের চারটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভবনগুলোতে ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বুধবারের সেই ভয়াবহতা আর শোক দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে নানাভাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন হয়তো ভেঙে নতুন ভবন হবে, সামনের সড়ক আবার আগের মতো হবে কিন্তু এই ঘটনায় যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন কিংবা যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের মনের মধ্যে যে ক্ষত তৈরি হলো, তা দূর হবে কীভাবে? প্রশ্ন এখন সবার।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর